, , , ,

গোমস্তাপুরে নারী দিবসে সফল উদ্যোক্তা মোবাদ্দেসা বৃষ্টির সাফল্য  জীবনের গল্প

কাবিরুল ইসলাম গোমস্তাপুর(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি:

গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খাবার তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এক নারী উদ্যোক্তা গৃহবধূ মোবাদ্দেসা বৃষ্টি । তিনি অনলাইনে, বিয়ে, পিকনিক, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অর্ডারের খাবর তৈরি করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন। নিজ পরিবহনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করে থাকেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বৈরতলা গ্রামের গৃহবধু । তাঁর স্বামীর নাম বাইরুল ইসলাম । তাঁর স্বামী, শ্বাশুড়ি, জা সহ পরিবারের সকলের সহযোগিতা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এ খাবারের ব্যবসা। তাঁকে আর পেছনে তাঁকাতে হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত বছরের আগষ্ট মাস থেকে এ ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র ২৫০০ টাকা দিয়ে এ ব্যবসার গোড়াপত্তন । প্রথমে এলাকার লোকজন ও শিক্ষার্থীরা ছিল তাঁর প্রথম ক্রেতা। খাবারের মান ভাল থাকায় বাড়তে থাকে তাঁর ব্যবসার প্রসার। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডাসকো ফাউন্ডেশন খাবারের মান দেখে তাঁদের অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার দেন।  পরবর্তীতে অনেকে প্রতিষ্ঠান অর্ডার দিয়ে খাবার নেন।ঘরোয়া পরিবেশে বড় জা কে নিয়ে খাবার তৈরি করেন।  এরপর অনলাইনে ড্রিম ফুড নামে পেজ খুলেন। এতে সে অনেক  সারা পেয়েছেন। অনেকে অর্ডার দিচ্ছেন। গ্রামের কিছু অসহায় মহিলা কাজ করছেন তার এ অর্ডারের খাবারের ব্যবসায়। বাড়িতে বসে দেশীসহ ফাস্ট ফুড খাবারে তৈরি করছেন। এতে তাঁর পরিবারের সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে অর্ডার করছে ক্রেতারা।

উদ্যোক্তা বৃষ্টি জানান, মোবাইলে ইউটিউব দেখার  সময় সিরাজগঞ্জের তিন বোনের অনলাইনে খাবার বিক্রি খবরটি দেখি। তাঁদের এ ব্যবসা দেখে উৎসাহ বেড়ে যায়। স্বামীকে জানালে সেইও উৎসাহ দেয়। বিষয়টি বড় জা কে জানালে সেই সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে। মাত্র ২৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করি। নিজে বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র ও পণ্য ক্রয় করি। শুরু হয় তাঁর খাবারের ব্যবসা। গ্রামের লোকজন প্রথমে খাবার নিতে শুরু করে, পরে স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। ধীরেধীরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় অনেকে বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে যান। এরপর অনলাইনে ড্রীম ফুড নামে একটি পেজ খুলেন। এখন তিনি প্রতিদিন অর্ডার পেয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খাবার ও ফাস্ট ফুড খাবার অর্ডার নিয়ে থাকি। তা নিজ পরিবহণ পৌঁছে দেওয়া হয়ে থাকে। পৌঁছে দেওয়ার কাজে বড় ভাসুর ছেলে মোটরসাইকেল করে  খাবার দিয়ে যান। অনেক সময় নিজে এসে অর্ডারের খাবার দিয়ে আসেন। তাঁর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে এলাকার বেকার ও দুঃস্থ মহিলাদের কাজে লাগিয়েছেন। ৫/৬ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। রহনপুর পৌর এলাকার অনেক বাসা,বাড়ি,চাকুরীজীবি,হোস্টেল,মেসে তিন বেলা খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এ খাবারের ব্যবসা করে অত্যান্ত খুশি। তবে সরকার একটু সহযোগিতা করেন তাহলে ব্যবসা আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি জানান, মাসে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন। তবে অর্ডারের উপর এ উপার্জন করে থাকি। তবে গ্রামের আরও কয়েকজন বেকার মহিলাদের সম্পৃক্ততা করবেন। অন্য মেয়েদের উদ্দেশে বলেন,বাড়িতে বেকার না বসে আমার মত যেকোনো কাজে যোগ দেয়া দরকার। বৃষ্টি জানান ঘরোয়া পরিবেশে তিনি দেশী খাবার, ফাস্ট ফুড, মোমো, বিরিয়ানি, রাইসবোল, পাস্তা, ফ্রাইড রাইস, চাইনিজ- চাওমিন, চিকেনফ্রাই, পিৎজা,বার্গার, শর্মা, সকালের নাস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার অর্ডার অনুযায়ী তৈরি করে থাকি। পিৎজা  ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, ফ্রাইড রাইস ৮০ টাকা, রাইসবোল ১০০ টাকা, শর্শা ৪০ টাকা,মোমো ২৫ টাকা, গরুর বিরয়ানী ১৬০ টাকা,চিকেন বিরয়ানী ১২০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া সাধ্যের মধ্যে বিভিন্ন খাবার চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি হয়ে থাকে। মানসম্মত ভাবে পরিবেশন করে থাকি। ভবিষ্যতে ইচ্ছা উপজেলার সদর রহনপুর একটি বড় ধরনের রেস্তোরাঁ খোলার।

বাড়িতে খাবার খেতে আসা ডাসকোর প্রতিনিধি শিশির রায় বলেন, চাকুরী সুবাদে বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কাজ করছি। বিভিন্ন সময় তাঁরা বৃষ্টির কাছে থেকে খাবারের অর্ডার দেয়। কম খরচে মানসম্মত খাবার তৈরি করে দেন। বাসায় কেউ নাই তাই দুপুরে খাবার খেতে এসেছি।

প্রতিবেশি শিক্ষক তোফিজুল ইসলাম  জানান, বৃষ্টি সম্পর্কে আমার বউ মা। বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে থাকে।  প্রথমে সে রাস্তার ধারে খাবার বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তী রাস্তা থেকে খাবারের অর্ডারের নিতে থাকেন। তাঁর জা (বড় বউ মা) তাঁকে সব ধরনের খাবার তৈরিতে সহযোগিতা করে চলেছেন। তাঁদেরকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে থাকি।

বৃষ্টির স্বামী বাইরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে তাঁকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তাঁর আগ্রহ দেখে আর বাঁধা দেয়নি। ২৫০০ টাকা দিয়ে সে ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকায় ইলেকট্রনিকস কাজের সুবাধে তাঁর স্ত্রী নিজ ইচ্ছায় স্বাবলম্বী হচ্ছে এতে নিজেকে এখন গর্ববোধ করি। গ্রামের মেয়েদের সে কর্মস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। দৈনন্দিনসহ মাসিক আয় ভাল করছেন। ব্যবসা যেহেতু ভাল হচ্ছে ভবিষ্যতে ব্যবসা প্রসারের জন্য চেষ্টা চলছে।

বোয়ালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামিউল আলম শ্যামল বলেন, খাবারের অর্ডারের ব্যবসা করে দিনদিন সে ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছেন। এলাকার মেয়েদেরকে কর্মস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছেন । দূর-দূরান্ত থেকে ভালই অর্ডার পাচ্ছেন তিনি ।নিজ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাদ্দেসা বৃষ্টির খাবার। তাঁর সাফল্য কামনা করছি।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225