, , , ,

মোংলার মিঠাখালী ইউনিয়নে বাগদা চিংড়ি চাষে ভাইরাসের মড়ক দিশেহারা চাষীরা

অতনু চৌধুরী (রাজু) বাগেরহাট জেলা প্রতিনধিঃ
 বাগেরহাটে প্রচন্ড তাপদাহ ও ভাইরাসে আশঙ্কাজনক হারে বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘেরের ছোট-বড় চিংড়ি মরে লাল হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে বাগদা চিংড়ির মড়কে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার চাষীরা। পূজি হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা, অল্প পানি, হঠাৎ বৃষ্টি ও হোয়াইট স্পট ভাইরাসে কারণে চিংড়ি মরছে এমনই ধারণা জেলা মৎস্য বিভাগের। বাগেরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় এবার ৬৬ হাজার ৭‘শ ১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬‘শ ৮৫টি চিংড়ির চাষ হয়েছে। প্রায় ৭৩ হাজার চাষী এসব চিংড়ি চাষ করেছেন। এর মধ্যে মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলায় সব থেকে বেশি বাগদার চাষ। এই চার উপজেলায়ই বাগদায় মড়র লেগেছে। শত চেষ্টায়ও বøাক টাইগারের মৃত্যু রোধ করতে পারছেন না চাষীরা। এর ফলে শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে বলে দাবি করেছেন চাষীরা। তবে জেলায় ঠিক কি পরিমান চাষী এবং কত টাকার ক্ষতি হবে তা জানাতে পারেনি মৎস্য বিভাগ। বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার মুজিবনগর এলাকার চাষী মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, ঘেরে মাছ ছেড়ে তিন চার মাস খাবার দিয়ে যখন মাছ বিক্রির সময় হয়েছে, তখনই মাছে মরক লাগল। যখন দুই একটা করে মাছ মরছিল, তখন দোকান থেকে বিভিন্ন ঔষধ দিয়ে মড়ক ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। একই উপজেলার  মিঠাখালী ইউনিয়নের দওেরমেঠ গ্রামের চাষী মনোজিৎ মন্ডল  বলেন, ঘেরে ভাইরাস ব্যাপক ভাবে বাগদার মড়ক দেখা দিয়েছে। নানা পরামর্শ নিয়েও কোন কাজে আসছে না। রাতারাতি ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে। কি করব ভেবে  পাচ্ছি না। মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের চিংড়ি চাষী অলোক মন্ডল ও হালিম শেখ বলেন, ঋণ করে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছিলাম। কিন্তু চিংড়ি যখন বিক্রি যোগ্য হয়েছে, তখনই ভাইরাস লেগে সব মরে গেল। কিছুদিন পরেই চিংড়ি ধরার কথা ছিল। কিন্তু ধরার আগেই আমার সব শেষ হয়ে গেল। মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের রঞ্জন  বলেন, আমাদের এখানে ৯০ ভাগ ঘেরের চিংড়ি মরে শেষ।যখন কেজিতে ৭০-৮০ পিস হয়েছে চিংড়ি, তখনই মরা শুরু করেছে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আশা ছিল চলতি মৌসুমে ঘেরের পরিবেশ ভালো যাবে এবং গত বছরের লোকসান উঠে আসবে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে যেভাবে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে আর ঘুরে দাড়াতে পারব কিনা জানিনা। বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি সুমন ফকির বলেন, দিন দিন বাগেরহাটে চিংড়ি চাষের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। একদিকে পোনা সংকট অপরদিকে রোগের প্রাদুর্ভাব। এভাবে চলতে থাকলে দরিদ্র চিংড়ি চাষীরা নিস্ব হয়ে যাবে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ,এস,এম রাসেল বলেন, জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে রামপালের চারটি ইউনিয়নে বেশি চিংড়ি মারা যাচ্ছে। মারা যাওয়া চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করছি আমরা। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি অতিরিক্ত গরম, হোয়াইট স্পট ভাইরাস বা মৌসুমের শেষে ভাইরাস যুক্ত চিংড়ি ঘেরে ছাড়ার কারনে এমনটা হতে পারে। এছাড়া অন্য কিছু জায়গাতেও চিংড়ি মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা উপজেলা মৎস্য অফিসারদের চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। জেলার অধিকাংশ ঘের প্রস্ততের আগে চাষীরা ব্লিচিং পাউডারসহ ভাইরাস মুক্ত করণের যে সব পদ্ধতি রয়েছে তা প্রয়োগ করেন না। গতানুগতিক ভাবে ঘের প্রস্তত করে চিংড়ির পোনা ছাড়েন তারা। এছাড়া চিংড়ি পোনা ছাড়ার আগে পোনা ভাইরাস মুক্ত কিনা তাও পরীক্ষা করার সুযোগ নেই তাদের। চাষীদের ঘের প্রস্তুত ও পোনা ছাড়ার সঠিক পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা। প্রয়োজনে উপজেলা মৎস্য অফিস ও জেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও তথ্য সংগ্রহের জন্য চাষীদের অনুরোধ করেন তিনি।
Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225