, , , , , , , , ,

মোটাতাজাকরণের গরুতে বিষাক্ত, মাংসে ভয়ানক ক্ষতি

বিপ্লবী জনতা ডেস্কঃ

 

গরু মোটাতাজাকরণে অবাধে ব্যবহার করা পাম ট্যাবলেট, স্টেরয়েড ও ডেক্সামেথাসন  ব্যবহৃত পশুর মাংস ভয়ানক ক্ষতিকারক হতে পারে মানবদেহের জন্য। কোরবানির ঈদে  অসাধু প্রক্রিয়া শুরু হয় মাসখানেক আগে থেকেই। বেশি লাভের আশায় অনেক খামারি পশুচিকিৎসকদের পরামর্শ না মেনে গরুকে স্টেরয়েড দেন।  অনেক ক্ষেত্রেই হাতুড়ে চিকিৎসক ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি প্ররোচনাও দেয় খামারিদের।

 

 

বিষাক্ত রাসায়নিকের হাই ডোজ প্রয়োগ করে অল্পদিনে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তাজা করা এসব গরুর মাংস খেলে লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজাকরণের ভয়ঙ্কর বিষাক্ত খেলায় মেতে ওঠেন একশ্রেণীর অতিলোভী ব্যবসায়ী।

 

ঈদের দুই থেকে তিন মাস আগে শীর্ণকায় গরু অল্প টাকায় কিনে তারা বিষাক্ত হরমোন, ইনজেকশন ও রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করে গরুকে মোটাতাজা করেন। বেশি মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত ডোজ ব্যবহার করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে গরুগুলো কোরবানির হাটে তোলেন। গরুগুলো ঈদের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাই না করলে নিজে নিজেই অনেক ক্ষেত্রে মরে যায়। কারণ গরুর শরীরের ঢুকিয়ে দেওয়া হয় স্টেরয়েড, হরমোন কিংবা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর সব রাসায়নিক।

 

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরুকে নিয়মমাফিক স্বীকৃত ফর্মুলা অনুসারে খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করলে তার মাংস ক্ষতির কারণ হয় না। কিন্তু স্টেরয়েড দিয়ে মোটা করা গরুর মাংস ক্ষতিকর। স্টেরয়েড মূলত হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ জাতীয় ওষুধ, যেমনথ ডেক্সামেথাসন বা ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ায় শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। এ কারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা দেখায়।

 

 

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, গরু মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। এটি একটি স্বল্পমেয়াদি লাভজনক পদ্ধতি। প্রাকৃতিক এ পদ্ধতি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে গরু মোটাতাজা করে হাজার হাজার বেকার যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ জন্য গরুচাষিদের দুই থেকে আড়াই কেজি বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত ইউরিয়া, লালিগুড় ও খড়ের একটি বিশেষ ধরনের মিকচার খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। আট দিন কোনো পাত্রে এ মিকচার বন্ধ করে রেখে তা রোদে শুকিয়ে গরুকে খাওয়াতে হয়। তিন মাস ধরে এটা খাওয়ালে গরু খুব দ্রুত মোটাতাজা হয়ে ওঠে। অথচ কিছু পশুচিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত মোটাতাজা করতে ক্যাটাফস, বার্গাফ্যাট, বায়োমিঙ্গ খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকদের নিয়মমাফিক উপায়ে মোটাতাজাকরণে উব্দুদ্ধ করলেও অনেকে দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় গরুকে বড়ি খাওয়ায়। অভিযোগ রয়েছে, এই বড়ি ভারত ও পাকিস্তান থেকে অবৈধভাবে আমদানি করে বিভিন্ন ওষুধের দোকানসহ গো-খাদ্য বিক্রেতাদের দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ এসব ওষুধ সীমান্তে আটকও হচ্ছে।

 

পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে ক্ষতিকর নানা ওষুধ ও রাসায়নিক সেবনের মাধ্যমে এখন গরু মোটাতাজা করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, রাসায়নিকে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে মানবদেহে সরাসরি ক্ষতিকর স্টেরয়েডের প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। এ মাংস গ্রহণের ফলে দুর্বল লিভার ও কিডনি রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরি হয়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের এক চিকিৎসক জানান,  বিষাক্ত ওষুধ নিশ্চয়ই উড়ে দেশে আসছে না। কেউ না কেউ নিয়ে আসছেন। সেই ওষুধ পশুতে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে সাধারণত বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ কাজে স্টেরয়েড আইটেমের ডেক্সামেথাসন গ্রুপের বিভিন্ন ইনজেকশন প্রয়োগ হয়ে থাকে। এছাড়া ইউরিয়া খাওয়ানো হয়। মুখেও বিভিন্ন ধরনের উচ্চ মাত্রার ভিটামিনের মিশ্রণ খাওয়ানো হয়। কোরবানির আগে এ প্রবণতা বেড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, স্টেরয়েড আগুনের তাপেও নষ্ট হয় না। যা সবচেয়ে মারাত্মক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব গরুকে পাম ট্যবলেট, ডেক্সামেথাসন ও স্টেরয়েড খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়, সেগুলোর মাংস খেলেও মানবদেহে ওই সব রোগ হওয়ার শঙ্কা থাকে।

 

প্রাণীবিদরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে শক্তি-সামর্থ্যের কোনো গরু যেমন তেজি ও গোয়ার প্রকৃতির হয়, এই গরুগুলো ঠিক উল্টোভাবে ধীর ও শান্ত হয়ে থাকে। শরীরে ও আচরণে কোনো তেজি ভাবই দেখা যায় না। স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু চেনার উপায় হচ্ছে, এসব গরু অসুস্থতার কারণে সব সময় নীরব থাকে। কৃত্রিমভাবে মোটা করা এসব গরুকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারা যায়। মোটাতাজা গরুর মধ্যে পাবনা ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান-ফিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ানা ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড, হেমাটোপিনসহ কিছু পরিচিত জাত রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় ব্রিডিং পদ্ধতি, যা লোকাল ক্রস ব্রিড নামে পরিচিত। এসব ব্র্যান্ডের সব গরুই মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় বড় করা হচ্ছে।

 

সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, ক্ষতিকর ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মোটাতাজা করা গরু কোরবানির হাটে তোলা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আসন্ন ঈদুল আজহায় প্রতিটি গরুর হাটে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে গরুর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। যদি কোনো গরুর রক্ত পরীক্ষায় বিষাক্ত কিছু ধরা পড়ে, তাহলে সেই গরুকে সিল করে দেওয়া এবং গরু বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সবচেয়ে জরুরি।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225