, , , ,

বানারীপাড়ায় মানব কল্যাণে সেবা দেয়া সেই পুলিশ এখন মঠবাড়ীয়ার অসহায় বয়োবৃদ্ধার পাশে

মোঘল সুমন শাফকাত,বানারীপাড়াঃ
বানারীপাড়ায় মানব সেবার ব্রতী নিয়ে অসহায় মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে সেই পুলিশ অফিসার মোঃ জাহিদ হোসেন মঠবাড়ীয়ার দুঃখি পরিবারের পাশে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের টিকিকাটা গ্রামের মৃত হামেজ উদ্দিনের স্ত্রী বয়োবৃদ্ধা শামবরু বেগম(৭৫) ভিক্ষা করে অতিকষ্টে জীবন-যাপন করছে। তার কোনো ছেলে-মেয়ে এমনকি ভাই-বোনও নেই। ভিক্ষুক স্বামী হামেজ উদ্দিনকে নিয়ে সরকারি ভেরিবাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে তিনি বসবাস করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় মঠবাড়িয়া উপজেলার ১০নং গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের আরেক বিধবা মোসা. পারভীন বেগম (৪৪) এর জরাজীর্ণ ঘরে। বিয়ের পূর্ব থেকেই মা-বাবার সঙ্গে ও বিবাহিত জীবনে স্বামীর সঙ্গে ভিক্ষা করে নিঃসন্তান শামবরু ভিক্ষুক জীবনের ৬০টি বছর অতিক্রম করেছেন। শামবরু পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানতে পারেন মঠবাড়ীয়া থানার এএসআই জাহিদ হোসেন। এ পুলিশ সদস্য সিদ্ধান্ত নেন প্রতি মাসে নিজের নামের সরকারী রেশন সহ তার সাধ্যমত সহযোগীতা করে ওই অসহায় বয়োবৃদ্ধার কাছে তুলে দেবেন বিনিময়ে ওই ভিক্ষুক বয়োবৃদ্ধাকে অঙ্গীকার করান (মহানবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা) জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবেন আর কখনো ভিক্ষা করবেননা। এমন মানবিক জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তাকে কাছে পেয়ে অসহায় বিধবার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে খুশির ঝিলিক। এএসআই জাহিদ পুলিশের চাকরির পাশাপাশি অবসর পেলে যে কোনো সামাজিক সমস্যা নিরসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তিনি অসহায় ও গরীব-দুখি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে সেবামূলক কাজের পাশাপাশি সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্যও করে থাকেন। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত তার অতীত কর্মস্থল বানারীপাড়া থানায় থাকাকালীন সময়ে রেখেছেন। কখনো অসহায় পরিবারের সন্তানদের স্কুলে লেখা-পড়ার দায়িত্ব নেয়া, পঙ্গু ও শরীরিক প্রতিবন্ধীদের হাঁস অথবা মুরগী কিনে দিয়ে স্বাবলম্বী করা, মোবাইল আসক্তি ছেড়ে খেলা-ধুলার প্রতি শিশু-কিশোরদের আগ্রহী করে তোলার জন্য তাদের হাতে খেলা-ধুলার সামগ্রী তুলে দেন, করোনার সময়ে গৃহবন্ধী মানুষের সময় কাটানোর জন্য ধর্মীয় পুস্তক ও লুডু কিনে দেন, রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে কখনো ভাঙা রাস্তা মেরামত করে মানুষের চলাচলের উপযোগী করে দেন, ভাঙা সাঁকো ও পুল সংস্কার করে চলাচল উপযোগী করে দেন, পথচারীদের যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করেন, অসুস্থ অথবা মানসিক প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, সরকারি পরিত্যক্ত জমিতে বজ্রপাত নিরোধের জন্য তালবীজ রোপন করা, সড়কের পাশে আমড়া, পেঁপেঁ, বেগুন ও লাউগাছ রোপণ করে সাধারণ মানুষের জন্য ফল ও সবজির ব্যবস্থা করেন। তিনি তার জন্মস্থান পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালি ইউনিয়নের দেউলী গ্রামে করোনাকালীন ও অন্যান্য সময়ে মৃত ব্যক্তির দাফনের নিমিত্তে পারিবারিকভাবে ১৭ শতক জায়গা গোরস্থানের জন্য দান করে দেন। এছাড়া মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও তিনি আপোশহীন, যা আজ সর্বজনবিদিত। এএসআই জাহিদ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় তার কেমিস্ট বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত “ইসমাইল সিকদার কল্যাণ ফান্ড”র মাধ্যমে এ ধরনের সামাজিক কর্মকান্ড ও জনকল্যাণে আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকেন। উল্লেখ্য, পুলিশের এএসআই জাহিদুল ইসলাম সমাজসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ এবং দ্রুত ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য মোট ৯ বার বরিশাল জেলার শ্রেষ্ঠ এএসআই এবং সংসদ সদস্য, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সমাজসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন। এ বিষয়ে এএসআই জাহিদ জনান, পুলিশের চাকরির সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সময় ও সুযোগ পেলে তার সামর্থ্য অনুসারে যেটুকু পারেন অসহায় ও আর্ত-মানবতার সেবায় মানুষের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225