, , , ,

লে আগুন: অভিযান-১০ ট্রাজেডি যমজ বোনের পরে এলো মায়ের লাশ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বরগুনার তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার দুই যমজ মেয়ের লাশের পরে এবার এলো মা শিমু আক্তারের লাশ। নিখোঁজের ৫ দিন পর বুধবার দুপুরে শিমু আক্তারের লাশ সুগন্ধা নদীতে ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে শিমুর ভাই হান্নান গিয়ে তার বোনের লাশ শনাক্ত করেন। নদী থেকে উদ্ধারকৃত শিমুর লাশটি তার ভাই হান্নানের কাছে হস্তান্তর করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।

এদিকে শিমুর লাশ তার দুই যমজ কন্যার কবরের পাশেই দাফন হবে। বাড়িতে প্রতিবেশীরা শিমুর কবর প্রস্তুত করছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দাফনের কাজ চলছে,এ সময়ও নেই কোন কান্নার আওয়াজ। শিমুর মা দুলু বেগম (৫৫) ওই লে ই আগুনে পুরে আহত হয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বাড়ীতে শিমু’র বাবা আজিজ হাওলাদার ছাড়া আপন বলতে আর কেহই নেই। মেয়ের লাশের খাটিয়ার পাশে দাড়িয়ে থেকে কিছুই বলার যেনো ভাষা নেই তার মুখে।

জানা গেছে, বরগুনা তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে শিমু তার দুই যমজ কন্যা লামিয়া-সামিয়া এবং মা দুলু বেগম (৫৫) কে নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনা আসার জন্য এমভি অভিযান-১০ লে রওয়ানা দেন। লে ওঠে শিমু তার বৃদ্ধ বাবা আব্দুল আজিজ হাওলাদারের কাছে ফোন করে এ খবর জানান। সকালে বৃদ্ধ বাবার কাছে খবর আসে ওই লে ই আগুন লেগেছে।

লে র ওই আগুনে আব্দুল আজিজের দুই নাতনি পুড়ে মারা গেছেন। লাশও পেয়ে দাফন করেন কিন্তু তখন তার মেয়ে শিমু নিঁেখাজ ছিলো। স্ত্রী দুলু বেগম হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ দিকে শিমুর স্বামী রবিউল দুই মেয়ে স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমজ বোন লামিয়া-সামিয়া’র কবরের পাশেই তার মা শিমুর কবর প্রস্তুত হচ্ছে। প্রতিবেশিরা যাওয়া আসা থাকলেও বাড়িতে নেই কোন কান্নার শব্দ। এলাকার লোকজন জানান, রাতেই শিমু’র অর্ধগলিত লাশ বাড়ীতে আসছে। যত তারাতারি সম্ভব লাশটি দাফনের চেষ্টা চলছে।

সাংবাদিকদের দেখে আব্দুল আজিজ হু-হু করে কেঁদে উঠে বলেন, মোর নাতীর (নাতনী) পোড়া লাশের পাশে মাইয়াডার লাশ। এ করুন অবস্থা চোহের সামনে কেমনে সই। এ কেমন বিচার করলো আল্লাহ্। মুই কি ভুল হরছি আল্লাহ্’র ধারে, যে হেই ভুলের এতো বড় শাস্তি দিলো মোরে। এহন মাইয়াডার মরা মুখটি খুলে দেন তার মুখটি শেষবারের মতোই দেখবো।

তিনি আরও বলেন, যে সন্তানের লাশ বাবা কাঁেধ নিয়ে কবরস্থানে গিয়ে দাফন করে এ দৃশ্য না দ্যাখলে আম্মেরা কেম্মে বোঝবেননা। এই কষ্টের ভার একজন বাবা কেম্মে মেনে নেবে। মেয়েডার লাশ সামনে রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

শিমুর ভাই হান্নান বলেন, প্রতিদিনই বোনের লাশের খোঁজখবর নিতে ঝালকাঠি সেই ঘটনাস্থলে যাইতাম। বুধবার জানতে পারি দুইটি মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে যাই গিয়ে দেখি আমার বোনের লাশটি পড়ে আছে মাটিতে। জেলা প্রশাসনের কাছে বোনের সকল তথ্য দিয়ে আমার বোনের লাশ নিয়ে বাড়িতে আসি।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন বলেন, নিহতদের পরিবারকে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225