, , , ,

পিকনিক ট্রাজেডি : বেনাপোলে নিহত ৯ শিশুর স্মরণসভা

মোঃ নজরুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি:

মা আজও অপেক্ষায় সোনামনি ফিরবে। কিন্তু ফেরেনি। সেই ২০১৪ সাল থেকে কেবল রক্তাক্ত ১৫ ফেব্রæয়ারি ফিরে আসে কিন্তু মুজিবনগর পিকনিকে যাওয়া সার্বক্ষণিক প্রাণ জুড়ানো মা-মা বলে ডেকে ওঠা গানের পাখিরা ফেরেনা। কে দেবে সন্তান হারানো মাকে সান্তনা! প্রতি বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারি এলে পিকনিক ট্রাজেডিতে নিহত ৯ শিশুর মায়েদের হৃদয় ফাটা আহাজারি আর বাবাদের কলিজা ছেঁড়া আর্তনাদ বেনাপোলের আকাশ বাতাস ভারি করে তোলে। নিস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা এলাকার মানুষের মন।

১৫ ফেব্রæয়ারি, ২০১৪ সাল। এইদিনের ভোরবেলা, বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মা-বাবার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সেজেছিলো ফাল্গুনের কৃষ্ণচুড়ার রুপ নিয়ে অপরুপ সাজে। নিজহাতে সন্তানদের সাজিয়ে তুলে দিয়েছিলো মুজিবনগরবাহী পিকনিকের বাসে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। এক অমানিশার কালো অন্ধকার রাত মুজিবনগর থেকে ফেরার পথে যশোরের চৌগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় কেড়ে নিলো ৯ কচি প্রাণ। আহত হয়েছিলো শিক্ষকসহ অর্ধ শতাধিক শিশু। মুহূর্তে বেনাপোল শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সন্তান ফেরার অপেক্ষারত বাবা-মা, স্বজনেরা জেনে যায় সড়ক দুর্ঘটনার কথা। বেনাপোলসহ যশোর জেলাব্যাপী বিরাজ করে এক অশান্ত আহাজারির পরিবেশ।

সেদিনের সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ৩ দিন পর মানবতার জাদুকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ততকালিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও স্থানীয় এমপি আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন শান্তনা দিতে আসছিলেন নিহত ৯ শিশু শিক্ষার্থীর বাড়িতে। কিন্তু, কোনো মাকে শান্তনা দিতে পারেননি। প্রত্যেক মায়ের আহাজারিতে অবুঝ শিশুর মতো নিঃশব্দে কেঁদেছিলেন তারাও।
সেই পিকনিক ট্রাজেডির দিনটিকে স্বরণে রেখে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ১৫ ফেব্রæয়ারি, মঙ্গলবার সকালে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল হয়েছে। এসেছিলেন সন্তান হারানোর শোকে পাথর ৯ জননী। চারিদিকে অপলক দৃষ্টিতে কচি কচি শিশুদের ভিড়ে খুঁজছিলেন পিকনিকে যাওয়া তাদের আদরের সোনামণিদের। তারা কখন এসে মা-মা বলে কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরবে, চুমু দিবে আর বলবে, জানো মা! জানো বাবা! পিকনিকে খু-ব মজা করেছি। কিন্তু না…..।

প্রতিদিন সূর্য ফেরে। ফেরে সোনালী জোস্নানা, শুধু ফেরেনা ওরা। নেই সে আল্লাদে ভরা মা…মা.. ডাক। নেই বাবার গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিসে আবদার। ওরা চলে গেছে বহু দূর। আর ফিরবেনা কোনো দিন। রেখে গেছে অজ¯্র স্মৃতি বিজড়িত প্রতিচ্ছবি। যা শুধু আজ প্রতিধ্বনিত হয়ে নিহত ৯ শিশুর মা-বাবার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে চলেছে।

এদিন, নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে বেনাপোলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলো বেনাপোলে শোক র‌্যালী, সকাল থেকে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া অনুষ্ঠান করে। নিহতদের স্মৃতি ধরে রাখতে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ৯টি তীরবিধা রক্তাক্ত কবুতরের স্তম্ভে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ৯ শিশু শিক্ষার্থীর স্মরণ সভার সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ে সভাপতি মোস্তাব হোসেন স্বপন এবং সঞ্চালনা করেন প্রধান শিক্ষক উজ্জত আলী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ এনামুল হক মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নাসির উদ্দিন, শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও যশোর জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান, উপজেলা প্রাথমিক সহশিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজমনি, বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ বজলুর রহমান, পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও পৌর কাউন্সিলর আহাদুজ্জামান বকুল, কাউন্সিলর কামরুন নাহার আন্না, পৌর সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুধীবৃন্দ।

উল্লেখ্য, বেনাপোল-মুজিবনগর পিকনিক ট্রাজেডিতে নিহত সোনামণিরা – বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী জেবা আক্তার, ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা আক্তার, রফিকুল ইসলামের মেয়ে চতূর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুনা আক্তার মীম, লোকমান হোসেনের ছেলে চতূর্থ শ্রেণীর ছাত্র শান্ত, মনির হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইকরামুল, ইদ্রিস আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইয়ানুর রহমান, গাজিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির হোসেন ও নামাজ গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225