, , , ,

ঈদের চতুর্থ দিনে ধারন ক্ষমতার দ্বিগুন যাত্রী নিয়ে আমতলী থেকে দুটি ল ছেড়ে গেছে!

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
নাড়ীর টানে বাড়ী ফেরা মানুষগুলো জীবন জীবিকার তাগিদে ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদের চতুর্থ দিন (শুক্রবার) ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুন যাত্রী নিয়ে আমতলী ল ঘাট থেকে ঈদ ষ্পেশাল এমভি শতাব্দি বাঁধন ও এমভি তরঙ্গ-৭ নামের দুটি ল ছেড়ে গেছে। ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী যাত্রী নেয়ায় যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া লে র ষ্টাফ ও দালালদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকায় কেবিন ও ডেকের জায়গা কিনতে হচ্ছে এমন অভিযোগ আল আমিন ও কালাম সিকদারসহ অনেক যাত্রীর।
জানাগেছে, নদীপথ আমতলী – ঢাকা রুটে এমভি তরঙ্গ-৭, এমভি ইয়াদ-১, এমভি সুন্দরবন –-৭ ও ঈদ ষ্পেশাল এমভি শতাব্দি বাঁধন নামের চারখানা ল সার্ভিস রয়েছে। ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার জন্য ল মালিক কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ঈদ ষ্পেশাল এমভি শতাব্দি বাঁধন নামের একটি ল চালু করেছে। অভিযোগ রয়েছে ল মালিক কর্তৃপক্ষ বরগুনা বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মোঃ মামুনুর রশিদকে ম্যানেজ করে যাত্রী ধারন ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুন থেকে তিনগুন যাত্রী পরিবহন করছেন। এমভি তরঙ্গ-৭ লে যাত্রী ধারন ক্ষমতা-৭০২ জন কিন্তু নেয়া হচ্ছে অন্তত এক হাজার থেকে দের হাজার। ঈদ ষ্পেশাল এমভি শতাব্দি বাঁধন লে র ধারণ ক্ষমতা ৮৯১ জন কিন্তু নেয়া হচ্ছে দের হাজার থেকে দুই হাজার। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে সরকারী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন ল কর্তৃপক্ষ। পূর্বে আমতলী – ঢাকা প্রথম শ্রেনীর সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ছিল এক হাজার চার’শ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার আট’শ টাকা এবং ডেকের যাত্রীদের ভাড়া ৪’শ ৫০ টাকা। ঈদের আটদিন পূর্বে কোন কারন ছাড়াই এ ভাড়া বৃদ্ধি করে সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ৬’শ টাকা, ডাবল কেবিন তিন হাজার ২’শ টাকা এবং ডেকের ভাড়া পাচ’শ টাকা আদায় করছেন। এদিকে শুক্রবার এমভি শতাব্দি বাঁধন ও এমভি তরঙ্গ-৭ নামের দুটি ল অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে আমতলী ল ঘাট ছেড়ে গেছে। এরপর মাঝপথে পুরাকাটা, আয়লা পাতাকাটা, কাকরাবুনিয়া, ভয়াং, পায়রাকুঞ্জু ও ভিখাখালী নামের ছয়টি ঘাট রয়েছে। ওই সকল ঘাট থেকে অন্তত আরো এক হাজার যাত্রী লে উঠেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ধারন ক্ষমতার চেয়ে চারগুন যাত্রী নিয়েই ল দুটি ঢাকায় পৌছবে। এতে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপর দিকে ঈদ ষ্পেশাল এমভি শতাব্দি বাঁধন ল সার্ভিস চালু করায় যাত্রীদের বেশ সুবিধা হয়েছে বলে জানান যাত্রী নিজাম উদ্দিন, ও অডিট অফিসার মংখেলা ।
শুক্রবার আমতলী ল ঘাট ঘুরে দেখাগেছে, এমভি শতাব্দি বাঁধন ও এমভি তরঙ্গ-৭ দুটি লে র প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ডেক বোঝাই যাত্রীতে। তিল পরিমান ফাঁকা নেই। ল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ঠাসাঠাসি দেখেও না দেখার ভান করছে। মানুষ ডেকে জায়গা না পেয়ে লে র ছাদে ও সম্মুখ্যভাগে অবস্থান করেছেন। অনেক যাত্রীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন ষ্টাফ ও একটি দালাল চক্র লে র ডেকে বিছানা (তোষক) বিছিয়ে রেখেছেন। ওই বিছানা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নাজমুল ইসলাম এমভি তরঙ্গ লে অভিযান চালান। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে দালাল চক্র ডেক থেকে বিছানা (তোষক) তুলে নেন। আর কখনো ডেকে বিছানা বিছিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করবে না বলে লে র সুপার ভাইজার মোঃ হুমায়ুন কবির ম্যাজিস্ট্রেটকে নিশ্চিত করেছেন।
তালতলী উপজেলার ছোটবগী গ্রামে মোঃ কালাম সিকদার বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই এমভি তরঙ্গ-৭ লে ঢাকায় যাচ্ছি। লে র স্টাফরা তোষক বিছিয়ে অতিরিক্ত টাকায় আদায় করছে। ম্যাজিস্ট্রেট আসার পরে তারা তোষক সরিয়ে ফেলেছে।
আয়লা পাতাকাটা গ্রামের মোঃ আল আমিন বলেন যাত্রী বোঝাই লে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। কি হয় আল্লায় জানে। তিনি আরো বলেন, লে র ডেকে টাকা দিয়ে জায়গা কিনে বসেছি।
কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর গ্রামের শাহীন বলেন, লে র ডেকে তিনজনের জন্য এক হাজার দুই’শ টাকায় জায়গা কিনেছি। টাকা না দিলে লে জায়গা পাওয়া যায় না।
লে র যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কথা ল কর্তৃপক্ষকে আমি বলে ছিলাম। তারা উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে বলে এভাবে গেলে যান, না হয় ল থেকে নেমে যান।
এমভি তরঙ্গ লে র সুপার ভাইজার মোঃ হুমায়ূন কবির ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ বেশী। তাই বেশী নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ডেক থেকে বিছানা ( তোষক) তুলে নেয়া হয়েছে।
এমভি শতাব্দি বাঁধন লে র সুপার ভাইজার রফিক মিয়া বলেন, ঈদ উপলক্ষে লে যাত্রীদের চাপ বেশী। তাই কিছু যাত্রী বেশী নিয়েছি।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিতে পারবে না। এর ব্যতিক্রম হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ লে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ বেশী। তারপরও ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী যাত্রী নেয়া যাবে না। বেশী যাত্রী নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, কোন ক্রমেই অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না। এমভি তরঙ্গ লে অভিযান চালিয়ে যাত্রী হয়রানী বন্ধে ডেকের বিছানা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ডেকে কখনো বিছানা (তোষক) বিছিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করবে না বলে ল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225