মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন

খানজাহান আলী মাজারের কুমিরের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক / ২৭ শেয়ার
প্রকাশিত : শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩

  1. বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের দীঘির পুরুষ কুমিরটির মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর মাজারের দীঘির দক্ষিণ–পশ্চিমপাড়ে কুমিরটি মরদেহ ভাসতে দেখা যায়।

এর ফলে মাজারের দীঘিতে এখন শুধু নারী কুমিরটিই জীবিত থাকল। এগুলো ঐতিহাসিক মাজারটির পুকুরের প্রাচীন কুমির নয়। এখানে হযরত খানজাহান আলীর (রহ.) আমলের কুমিরের বংশধর ছিল কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়। ওই দুটি কুমির দেখতে হাজার হাজার দর্শণার্থী আসত। কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের মৃত্যুর পর মিঠা পানির কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে ভারতের মাদ্রাজ থেকে এই দুট সহ মোট ৬টি কুমির এনে ছাড়া হয়।

বাগেরহাট প্রাণি সম্পদ বিভাগ বিকেল ৫টার দিকে মৃত কুমিরটি পানি থেকে তুলে বিভিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে। এসব অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার ফরেনসি বিভাগে পাঠানো হচ্ছে।

মাজার দীঘির পাড়ে যুগযুগ ধরে বসবাস করা খাদেমরাই কুমিরগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। দর্শণার্থীদের দীঘির কুমির দেখিয়ে স্থানীয় খাদেমরা আয় রোজগার করে থাকেন।

বাগেরহাট হযরত খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘২০০৫ সালে বিলুপ্তি ঠেকাতে মিঠা পানির ছয়টি কুমির ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে এনে দীঘিতে ছাড়া হয়। এই কুমিরগুলো ছিল হিংস্র স্বভাবের। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারির কারণে দুটির মৃত্যু হয়। দুটি সরিয়ে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে নেওয়া হয়। বাকি দুটি দীঘিতে বসবাস করছিল। এই দুটির একটি পুরুষ, একটি নারী। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুষ কুমিরটির মৃতদেহ দীঘির দক্ষিণ পশ্চিম পাড়ের মোস্তফা ফকিরের ঘাটের অদূরে ভাসতে দেখা যায়। কবে কখন কুমিরটি মারা গেছে বলতে পারব না।’

মারা যাওয়া কুমিরটি সর্বশেষ খাদেম মোস্তফা ফকিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল জানিয়ে শের আলী ফকির বলেন, ‘মোস্তফা কুমিরটিকে আটকে রেখে মাজারে আসা দর্শণার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিল।’

ঘাটে কুমির আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোস্তফা ফকিরের স্ত্রী সাকিলা বেগম। তিনি বলেন, ‘সদ্য নাতি হওয়ায় গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আমরা সবাই হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমির মারা যাওয়ার খবর পাই। আমার স্বামী খাদেম মোস্তফা কুমিরটিকে খাবার দিতেন। খাবার খেয়ে আবার কুমিরটি দীঘিতে চলে যেত। কুমিরটি মৃত্যু কেন হল তা বলতে পারব না।’

স্থানীয় বাসিন্দা বীনা বেগম বলেন, এই দীঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে নতুন করে আরও কুমির ছাড়ার দাবি জানাচ্ছি।

বাগেরহাট প্রাণি সম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারী কর্মকর্তা মনোহর চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘স্থানীয়দের সহযোগিতায় দীঘির পানি থেকে মারা যাওয়া কুমিরটি তোলা হয়েছে। এটি পুরুষ। মৃতদেহ দেখে ধারণা করছি অন্তত ৬০ ঘন্টা আগে কুমিরটির মৃত্যু হয়। কুমিরটির দৈর্ঘ্য ১২ ফুট। বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। কুমিরের বিভিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে তা ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার ফরেনসিকে পাঠানো হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানান এই চিকিৎসক।’

বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিরটির মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় খাদেমরা বিচার দাবি করেছেন। প্রাণি সম্পদ বিভাগ কুমিরটির ময়নাতদন্ত করবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

Facebook Comments Box


এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
Developed by: Agragamihost.Com