শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন

আমতলীতে বাড়ছে ডায়রিয়ার রোগী ৪৮ ঘন্টায় ৬২ জন ভর্তি, স্যালাইনের তীব্র সংকট

অনলাইন ডেস্ক / ১০ শেয়ার
প্রকাশিত : শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।

আমতলীতে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ৪৮ ঘন্টায় ৬২জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফলে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্যরা। বেডে ঠাই না হওয়ায় আক্রান্ত রোগীরা নিরুপায় হয়ে বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে রোগীদের। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভর্তি রোগীদের বাহির থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। এতে গরীব রোগীরা পরেছে চরম দুর্ভোগে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুর থেকে শুক্রবার সকাল ১১ টা পর্যন্তÍ ৪৮ ঘন্টায় আমতলী হাসপাতালে ৬২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। ৬ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা সংকুলান না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে রোগীরা বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে সরকারী ভাবে এ চিত্র পাওয়া গেলেও গ্রামের চিত্র ভয়াবহ। অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে না এসে গ্রাম্য চিকিৎকের শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী বলে এক বেসরকারী তথ্যে জানা গেছে। গুলিশাখালী ইউপি সদস্য আব্দুল ওহাব আকন বলেন, প্রায় ঘরে ঘরেই এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্তের রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বেডের অভাবে অনেক রোগী হাসপাতালের বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিসা নিচ্ছেন। এসময় গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানি গ্রামের ষাটোর্ধ মজিদ হাওলাদার (৬৩) নামে এক রোগী বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে জায়গার অভাবে এখন বারান্দায় শুয়ে চকিৎসা নিচ্ছি। এখানে ফ্যান নেই গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে। চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামের আরেক রোগী রুকাইয়া (১৩) নামের এক কিশোরী বলেন, বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এখান থেকে বাথ রুমে যেতে কষ্ট হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বৈঠাকাটা গ্রামের আশমান খাঁ (৯০) বলেন, বাবা খালি পানির মত পড়ে। হাসপাতালে আইছি। হেও আবার রুম পাইনাই। ওষুধ নাই। বাইরে গোনে টাহা দিয়া স্যালাইন কেনতে অয়। মোরা গরীব মানু স্যালাইন কেনার টাহা পামু কোম্মে।

আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের আবু ছালেহ বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছি। এপর্যন্ত ৩হাজার লিটার স্যালাইন বাহির থেকে কিনে চিকিৎসা নিয়েছি।
আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের দুলাল সর্দার বলেন, মোর ৯ মাসের ছেলে ইয়াছিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে এনে ভুর্তি করেছি। এপর্যন্ত খাবার স্যালাইন ছাড়া আর কিছুই হাসপাতাল থেকে পাইনি।
আমতলী হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শরীরে পুশ করার জন্য কলেরা স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। স্যালাইন সংকট দেখা দেওয়ায় রোগীদের এখন ওষুদের দোকান থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।
আমতলী হাসপাতালের জরুররী বিভাগের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান খান বলেন, ডায়রয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশী। তিনি বলেন তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষ পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশী।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাওছার বলেন, শুকনো মৌসুমের কারনে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে এবং বিশুদ্ধ পানি পানের অভাবে এবং বৃষ্টি না হওয়ায় পানিতে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আজ বা কালের মধ্যে পাওয়া যাবে। স্যালাইন পাওয়া গেলে এ সংকট থাকবে না। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসা সেবায় কোন ঘাটতি নেই। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা সবাই আন্তরিক ভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।#

 

Facebook Comments Box


এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
Developed by: Agragamihost.Com