দৌলতপুরে বানভাসি মানুষের মাঝে বন্ধুসভার ত্রাণ বিতরণ

নদীভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন ইসহাক শেখ (৫৫)। বছরে ৭ হাজার টাকা ভাড়ায় অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তুলে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকছেন। অন্যের বাড়িতে কিংবা ফসলের মাঠে কাজ করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলছিলচার সদস্যের সংসার। কিন্তু করোনাকালে দিনমজুরির কাজ হারালেন। বর্গায় নেওয়া খেতের যে ফসল তাঁকে আশা দেখাচ্ছিল, তা–ও বন্যার পানিতে ডুবেছে। এখন হাতে টাকা নেই, ঘরে খাবার নেই।

 

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীবেষ্টিত দুর্গম বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বর্গাচাষি ইসহাক শেখ গতকাল এসেছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ নিতে। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও কুনো কাম নাই, খ্যাতও বইন্যায় ডুবছে। খামু কী, আর চলমু ক্যামনে জানি না। আপনাগোর তেরান দিয়া কয়দিন খাইতে পারমু।’

বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চারদিকে কেবল পানি আর পানি। বাড়িঘরে পানি, রাস্তা, খেত সব জায়গায় থই থই পানি। এ অবস্থায় মানুষের ঘরে খাবারের সংকট তীব্রতর হচ্ছে। গতকাল এই ইউনিয়নে ১০০ জন বানভাসির মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

 

কলাগাছের ভেলায় ভেসে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন ৬৫ বছরের জায়েদ আলী। করোনার কারণে তাঁর ছেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন।

তিনিও মাঝেমধ্যে গ্রামে দিনমজুরির কাজ করতেন, এখন সবই বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে একেবারে কাবু হয়ে পড়েছেন তিনি। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘খুবই পেরেশানিতে আছি। কোথাও কামকাইচ নাই।’

 

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাঘুটিয়া ইউনিয়ন। গতকাল ঝুমবৃষ্টির মধ্যে বন্ধুরা ট্রাকে ও নৌকায় উত্তাল যমুনা পাড়ি দিয়ে বাঘুটিয়ায় যান। নদীর তীরে বাঘুটিয়া বাজারের পাশে একটি মাঠে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, আলু ও লবণ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ওরফে রাজা, বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, বন্ধুসভার সভাপতি মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

 

ত্রাণ নিতে আসা মণ্ডলপাড়া গ্রামের জবেদা বেগমের (৬৫) স্বামী নেই। ছোট ছেলের সংসারে তিনি থাকেন। কিন্তু এখন ছেলেরও আয়–রোজগার বন্ধ। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘কুনোদিন হুনি নাই প্যাপারের লোকে তেরান দেয়।’

 

বয়স হলেও মাটির কাজ করে পেট চালাচ্ছিলেন দুলালি বেগম (৬০)। হতাশ কণ্ঠে এই সংগ্রামী নারী বলেন, ‘সব পানিতে তলাইয়া রইছে। কাজকর্ম নাই।’

 

আর ঘোড়ার গাড়ির চালক আজমত মোল্লা অভিযোগের সুরেই বললেন, তাঁদের ইউনিয়নটি বেশ দুর্গম বলে কেউই ত্রাণ নিয়ে আসতে চান না। কিন্তু এখানকার ঘরে ঘরে অভাব, খাদ্যসংকট।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225