লেবাননে বিস্ফোরণে নিহত ৭৮, আহত ৩৮০০

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের পর পর দুই বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত ৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ আহত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসানের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

 

৪ আগস্ট, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পরে রাজধানীর বন্দর এলাকায় ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

 

বিস্ফোরণের পর পরই এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান জানান, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ও বিবিসি জানাচ্ছে, বিস্ফোরণে আহতদের ভিড় উপচে পড়ছে বৈরুতের হাসপাতালে। একসঙ্গে এতো আহত মানুষের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেক পোড়া রোগী ও রক্তাক্তদের নিতে পারছে না হাসপাতালগুলো।

 

ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য চেয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থকর্মী ও দেশটির রাজনীতিবিদেরা হাসপাতালের আহতদের রক্তদান করতে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের লেবানিজ শাখা।

ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা করতে গিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রেডক্রসের লেবানিজ শাখার প্রধান জর্জ বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ এই বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছি। বিস্ফোরণস্থলের পাশে কিংবা সেখান থেকে অনেক দূরের রাস্তাগুলোতে যত্রতত্র আহত ও নিহত মানুষ পড়ে আছে।’

 

লেবাননের রাষ্ট্র-পরিচালিত ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা বৈরুত শহর। বিস্ফোরণ অনুভূত হয়েছে দেড়শো কিলোমিটার দূর পর্যন্ত। প্রথম দিকে বিষয়টিকে ভূমিকম্প ভেবেছিল সেন্ট্রাল বৈরুতের বাসিন্দারা।

 

এদিকে ঘটনার পর পর টুইটারে বিস্ফোরণের দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, সেন্ট্রাল বৈরুতের আকাশে ধোঁয়ার লাল কুণ্ডুলী। এর পরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সেন্ট্রাল বৈরুতের বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণটি এত শক্তিশালী ছিল যে বাসিন্দারা ভেবেছিল ভূমিকম্প হয়েছে। মানুষজন চিৎকার, ছুটোছুটি করেছে। বাসিন্দাদের তোলা ভিডিও এবং ছবিতে শহর জুড়ে ভবনগুলোর দরজা ও জানালার গ্লাস ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

 

টুইটারে এক বাসিন্দা বিস্ফোরণের ভিডিও আপলোড করে লিখেছেন, ঘটনাস্থল থেকে তার বাড়ি ১০ কিলোমিটার দূরে। অথচ এতো দূরেও তার এলাকা কেঁপে উঠেছে। এবং তার বাড়িসহ আশপাশের ভবনগুলোর জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে।

 

বিস্ফোরণটি কী কারণে ঘটেছে, তা এখনও স্পষ্টভাবে বলা না গেলেও ঘটনাস্থলে আতশবাজি থাকায় আগুন লাগার পর এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, আতশবাজির এক গুদাম থেকে এই বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। তবে লেবাননের রাষ্ট্র-পরিচালিত ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) বলছে, বন্দর এলাকায় একটি বিস্ফোরকের ডিপোতে আগুন লাগার পর ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যে স্থানটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বন্দরের গুদাম রয়েছে। রাসায়নিকের মজুদ থাকা বন্দরের গুদামে প্রথম আগুন লাগার কথা জানা গেছে। এদিকে লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেছেন, বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করা ছিল। তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। লেবাননের প্রেসিডন্ট মিচেল ওন দেশের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য যারাই দায়ী হোক, তাদের চরম মাশুল দিতে হবে।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225