সালথায় বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সভাপতির সাক্ষর জাল করে প্রতারণার অভিযোগ

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বাউষখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দূর্ণীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. সাহিদুজ্জামানের  বিরুদ্বে বিদ্যালয়ের সভাপতির সাক্ষর জাল করে নানা রকম প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২০১৯ সালের  ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় জনসাধারন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দূর্নীতির বিচারের জন্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে, পরে তাদের চাপের মুখে প্রধান শিক্ষক সাহিদুজ্জামানকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটি তাকে বহিস্কার  করে। এ নিয়ে সেই সময় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম দূর্নীতির খবর।

বিদ্যালয়ের নামে প্রায় ২০ বিঘা জমির আয়ের টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় এমন ২২/২৩ জনের ভূয়া নামে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, নিজের সন্তান অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও নিজ বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির তালিকায় রেখে টাকা ভোগ করা, নকল সার্টিফিকেট দেওয়া, পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়া, নারী কেলেঙ্কারীসহ নানান রকম অনিয়ম বেরিয়ে আসে তার বিরুদ্বে। তারপরও থেমে নেই তার অপকর্ম। এ বছরের  ৩ আগস্ট অত্র বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্ধেন্দু কুমার সরকার সংস্লিস্ট বিভিন্ন দপ্তর বরাবর এক লিখিত অভিযোগে জানান, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়নি, সভাপতিও পদত্যাগ করেননি।

বিদ্যালয়ে কোন মিটিংও করা হয়নি সভাপতি পরিবর্তনের। হঠাৎ গত ৩০ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা এর ওয়েবসাইটে বিদ্যালয় বরাবর একটি চিঠি প্রেরন করা হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. এমদাদ ফকির সেচ্ছায় পদত্যাগ করায় তার স্থলে জৈনিক শাহ-আলম খান নামের এক ব্যক্তিকে কমিটির অবশিস্ট মেয়াদকালের সভাপতি হিসাবে অনুমোদন দেওয়া হলো।

গত ২৮ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা এর বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মুনছুর ভূঞার সাক্ষরিত ঢাশিবো/বি/৩/১১৬/ফরিদ/২৫৬৯ নং স্মারকে চিঠিটি দেখা যায়। তিনি আরো জানান, ভিন্ন ভিন্ন সময় অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. এমদাদ ফকিরের সাক্ষর জাল করে তাকে পদত্যাগ, নতুন সভাপতি সিলেকশন, রেজুলেশন, নতুন কমিটির অনুমোদনের জন্য বোর্ডে প্রেরন দেখানো হয়েছে। অথচ এসবের কিছুই জানি না আমিসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা হঠাৎ শিক্ষা বোর্ডের চিঠি পেয়ে হতভম্ভ সকলে।

৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাক্ষর জাল করে রেজুলেশন দেখিয়ে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সাহিদুজ্জামান বেতন উত্তোলন করতে গেলে অগ্রণী ব্যাংক নগরকান্দা শাখার ম্যানেজার বিদ্যালয়ের সভাপতিকে অবহিত করালে বিতর্কিত ওই প্রধান শিক্ষক ব্যাংক থেকে পালিয়ে যায়। বিদ্যালয়ের সভাপতি মো.এমদাদ ফকির তিনিও বিভিন্ন দপ্তর বরাবর এক লিখিত অভিযোগে বলেন, গত ২২ জুন আমাকে পদত্যাগ দেখানো হয়েছে কিন্তু আমি কখনও পদত্যাগ করিনি, পদত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। আমাকে পেয়ে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি সন্তোষ্ট।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটি তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অনিয়মের কারনে বহিস্কার করে। এরপর থেকে সে আর স্কুলে আসে না। তার পদে বহাল হতে আদালতে মামলা করেছে সে আইনি লড়াই করে নির্দোষ প্রমানিত হলে সে ¯কুলে ফিরবে এতে আমার কোন আপত্তি নাই। তবে এখন তিনি আমার সাক্ষর জাল করে বিদ্যালয়ের সকলের অজান্তে এই সব অপকর্মে লিপ্ত ।

বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্য এসবের কিছুই জানেন না। এসব ওই প্রধান শিক্ষকের কারসাজি। এব্যাপারে সাবেক ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাহিদুজ্জামান এর মুঠোফোনে বারবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.আবুল খায়ের জানান, বাউষখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি  পদত্যাগ করেছেন এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমাকে মৌখিক বা লিখিত কোন কিছুই জানাননি। নতুন সভাপতি নির্বাচনের জন্যে আমাকে প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে কখনো আমন্ত্রনও জানানো হয়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্ধেন্দু কুমার সরকার তার বিদ্যালয়ের সভাপতি পরিবর্তনের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা থেকে প্রাপ্ত চিঠির জবাবের আলোকে আমাকে লিখিত একটি অনুলিপি দিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন সভাপতি নির্বাচিত করতে হলে নিদিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন আছে। আগের সভাপতির পদত্যাগ পত্র বা কমিটির মেয়াদকাল শেষ হলে তা আমাকে লিখিত জানাতে হবে। নতুন সভাপতি নির্বাচনের জন্যে প্রধান শিক্ষক আমার বরাবর লিখবে। আমি নির্বাচনের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করবো।

প্রিজাইডং অফিসার নির্বাচন পক্রিয়া শেষ করে নতুন কমিটি গঠন করবে। কমিটির অনুমোদনের জন্য শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে। কিন্তু বাউষখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোন কিছুই আমাকে লিখিত বা মৌখিক জানাননি। এতএব নতুন সভাপতি কিভাবে নির্বাচিত হলো তা আমার জানা নাই।

 

 

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225