চলতি বন্যার কারণে ঘিওর উপজেলার কৃষিপণ্য নির্ভর চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বন্যার পানির কারণে কলা গাছ মরে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন মানিকগঞ্জ ঘিওর উপজেলার ৭ ইউনিয়নের কলা চাষিরা। ঘিওর সদর ইউনিয়নের মাইলাগী এলাকার কলা চাষি মোঃ রাসেলের কলার বাগানে গিয়ে দেখে যায়, প্রায় সব গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগানে কলা গাছের গোড়া পচে দুমড়েমুচড়ে পরে রয়েছে গাছ।
ফলন্ত এসব গাছের কলা আর মাস খানেক পরই পরিপক্ব হওয়ার কথা। সারা বছর খরচ করার পর ফসল ঘরে তোলার সময় এই ক্ষতি কলা চাষিদের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে। বন্যায় প্রায় সব কলা গাছ মরে গেছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঘিওর উপজেলার কলা চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, ঘিওর উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা শাবরীকলা, সাগরকলা, কাচকলা, বিচিকলা জাতের কলা চাষ হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯ হেক্টর জমিতে কলা আবাদ করছিলেন উপজেলার কৃষকরা। বর্ষার পানি এসে সম্পূর্ণ কলা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।
কলা চাষি মোঃ রাসেল মিয়া জানান, আমি ঘিওর উপজেলার মাইলাগী- ২ একর,দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর- ১ একর, ধার-দেনা করে মোট ৩ একর জমিতে রঙ্গিন সাগর কলা আবাদ করেছি। চারা রোপন থেকে শূরু করে সার,কিটনাশক,সেচ,শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। জমি বর্গা নিয়ে এবং ঘিওর রূপালী ব্যাংক শাখায় থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে পাচঁ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করে কলার আবাদ করি। চারা রোপণ থেকে বিক্রির উপযোগী করতে প্রায় ৮-৯ মাস লেগে যায়। আগাম বর্ষার পানি এসে আমার জমির কলার গাছ সবগুলো মরে গেছে। এতে আমার প্রায় নয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন ব্যাংক ঋণ কিভাবে সুদ করবো জানিনা। এখন আমি কী খাবো? আর কী পরবো? কিছুরই দিশা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগীতা আমরা পায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন জানান,বণ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপজেলা উপ-সহকারী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান,ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতি পুসিয়ে নেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ ২১০০ জন কৃষকদের মাঝে সল্প মেয়াদী সবজি বীজ বিতরন করা হবে। এছাড়া তালিকা আসার পর অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হবে। যে পরিমান বরাদ্ধ পাওয়া যায় সে অনুযায়ী সরিষা, ভূট্টার বীজ ও সার বিতরন করা হবে।
উপজেলার কৃষকেরা অনেকেই কলা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্ত এত বড় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামথর্য নেই অধিকাংশ কৃষকের। সরকারী কোনো সহযোগীতা কখনও পাই নাই তারা। তাই তারা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন। তাদের দাবি, সরকারীভাবে সহজ শর্তে তাদের ঋণ দিলে তারা আবার ঘুরে দাড়াতে পারবে।