শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

তালতলীতে শাহাদত মাতুব্বর কৃষিতে বদলে দিয়েছেন তার গ্রাম

অনলাইন ডেস্ক / ৬০৮ শেয়ার
প্রকাশিত : শনিবার, ৬ মার্চ, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টারঃ
বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া গ্রামে জন্ম মোঃ শাহাদত হোসেনর। ২০০৬  সালে বি এ পাস করে তালতলী বাজার গার্মেন্টসের দোকান শুরু করেন। ব্যাবসায় লস হলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে হতাশায় ভুগতে থাকেন তিনি।
বে সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইতে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে কৃষকের সাফল্য দেখে নিজের ২ বিঘা জমিতে শুরু করেন কৃষি কাজ। প্রথম বছরে তার বীজতলা প্রস্তুত সহ বাগানে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা, বর্তমানে তিনি ৮ বিঘা জমি চাষ করেন। এখন তার দেখানো পথে এলাকার  ১৫০-২০০ জন কৃষক সাফল্য হয়েছেন।
কৃষকদের সহায়তা বদলে দিয়েছেন সওদাগর পাড়া গ্রাম।
নিজের অভাব মোচন হওয়ার পর শাহাদতকে সাংঘাতিক ভাবিয়ে তোলে গ্রামের মানুষ। তখন চিন্তা করেন, এই গ্রামের মানুষের মুক্তির জন্য দুটো পথ খোলা—এক. মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা, দুই. কৃষিতে স্বাবলম্বী করে মানুষের দারিদ্র্য ঘোচানো। এতে অন্তত ক্ষুধার তাড়নায় কাউকে কাঁদতে হবে না। এ চ্যালেঞ্জ দুটো সামনে নিয়ে মাঠে নামেন শাহাদত।
শাহাদত গ্রামের কৃষকদের অনাবাদি জমি আবাদের জন্য পরামর্শ দিতে থাকেন।
গ্রামের ক্ষুধার্ত কৃষকেরা তার কথায় আশার আলো দেখতে শুরু করেন।
সবাইকে মৌসুমি সবজি যেমন তরমুজ,শিম,বেগুন,বরবটি,ভুট্টা,লাউ, শসা,টমেটো, করলাসহ বিভিন্ন জাতের মৌসুমি ফল এবং সবজি আবাদের পরামর্শ দেন তিনি।
গ্রামের সবাই যার যেটুকু জমি আছে, সেই জমিতে শুরু করেন মৌসুমি সবজির আবাদ। দিনে দিনে মাস হয়, মাসের পর বছর। এত বছর পর সেদিনের পাথরের মতো কঠিন মাটির বুক এখন উর্বর, এ গ্রামের কৃষকের জমিতে এখন সোনা ফলে, কৃষক জমির ফসলের দাম পায়। সওদাগর পাড়ার কৃষি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল বিভাগের সকল বাজারে চলে যাচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হলে তালতলীর সবজি ঢাকায় চলেযাবে প্রতিদিন এ এলাকায় গড়ে দুই লক্ষদিক টাকার অধিক সবজি বিক্রি হয়।
 গ্রামে এরই মধ্য পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ছোটখাটো রোগশোকে এখন আর মানুষকে মরতে হয় না বিনা চিকিৎসায়। এখন প্রতিটি সূর্যাস্তের ভোরে বাড়ির বারান্দাগুলোয় মুখরিত হয়ে ওঠে ছোট শিশুদের ঠোটের ডগায় বুলির শব্দে। তবে এত কিছু একদিনে হয়নি কিন্তু। এর পেছনে রয়েছে মেধা, শ্রম আর সাহসী পদক্ষেপ। আগে যে কৃষকরা সুদে টাকা নিতেন এখন তারা চাইলে কয়েক লক্ষ টাকা মানুষকে ধার দিতে পারে।
এসব পদক্ষেপ সাদা মনের যুবসাহসী শাহাদত। শুধু কৃষিকে অবলম্বন করে বদলে দিয়েছেন পুরো গ্রামের চিত্র। সওদাগর পাড়া  গ্রামের কঠিন মাটিতে ফসল ফলাতে ঘর থেকে বের করেছেন কৃষককে। যে সওদাগর পাড়া  গ্রামের জমি এক ফসলের পরে চষতে গিয়ে কৃষক হতেন নাস্তানাবুদ, এখন সেই সওদাগর পাড়া  গ্রামের মাটিই উপজেলায় সবচেয়ে উর্বর ১২ মাস সবজি হয়। সওদাগর পাড়ায় এখন ফুল ফোটে, সেই ফুলের সুবাসে ভ্রমর গুঞ্জরিত হয়, মৌমাছিরা সুপ্ত পরাগ থেকে ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে এ যেন এক সবুজ–শ্যামল সুফলা ছবির মতো চিরায়িত বাংলার গ্রাম।
শাহাদত মাতুব্বর লড়ে যাচ্ছেন কৃষি নিয়ে, দেশের নতুন নতুন ফসলের জাত, নতুন নতুন উদ্ভাবন তাকে আন্দোলিত করে। নতুন কোনো উচ্চ ফলনশীল ফল কিংবা সবজির খবর পেলেই সে বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। সেই প্রশিক্ষণের সব মেধা কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেন। সেই ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করেন গ্রামের কৃষককে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কৃষির মাঝেই, কৃষকের মাঝে বেঁচে থাকতে চান তিনি।
শাহাদত হোসেন নিজ বাড়িতে সার, বীজ, কীটনাশকের দোকান দিয়েছেন। সেখানে দোকানের পাশাপাশি কৃষকদের বিনা পারিশ্রমিকে কৃষকের ফসলের খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে ফসলকে রক্ষার পরামর্শ দেন ।
শাহদত মাতুব্বর বলেন, ‘জীবনের একটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। জীবনের কাছে খুব একটা বেশি চাওয়া–পাওয়া নেই। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগীতায় কৃষিতে নিজেকে বদলেছি, বদলে দিয়েছি সওদাগর পাড়া গ্রামকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কৃষি এবং কৃষকের ভাগ্যবদলের জন্য কাজ করে যাব। সওদাগর পাড়া  অবহেলিত গ্রাম।’ রাস্তাঘাটে এখনো সমস্যা রয়েছে। সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, কৃষক যেন তাঁর আবাদকৃত ফসলের দামটা পান, তার পণ্যগুলো যেন সিন্ডিকেটের কবলে না পড়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান বলেন,একজন সাদা মনের মানুষ আদর্শ কৃষক শাহাদত মাতুব্বর। সওদাগর পাড়া গ্রামে তথা তালতলী উপজেলায় কৃষিতে তাঁর অবদান রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকেরা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশে খাদ্যঘাটতির একটা বড় সংকট দেখা দিত। এখানে আসার পর থেকেই চেষ্টা করছি উপজেলার এক ফসলি জমি গুলোকে তিন ফসলির আওতায় নিয়ে আসতে। আর কোন জমি পতিত রাখা যাবেনা সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। গত বছর রবি মৌসুমে চাষের আওতায় ছিল প্রায় ৬০০০ হেক্টর জমি। এ বছর ৯০০০ হেক্টরের চেয়ে বেশি জমি চাষের আওতায় নিয়ে এসেছি।
Facebook Comments Box


এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
Developed by: Agragamihost.Com