, , , ,

আর কত বয়স হলে ভাতা পাবেন রিজিয়া

স্টাফ রিপোর্টারঃ
ভোডের সময় আদর দ্যাহায়, ভোট গ্যালে চেয়ারম্যান আর মেম্বাররা মোগো জিগায়না। মরা পোলার বউর ধারে খাইয়া না খাইয়া থাহি, দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নেই। সরকার বোলে বয়সকো ভাতা দেয়, আর কতো বয়স অইলে ভাতো পাবো। এমনি ভাবে মনের ক্ষোভে বলতে বলতে কেঁদে দিলেন বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের মৃতু হাতেম আলীর স্ত্রী ৮২ বছর বয়সী রিজিয়া বেগম।

রিজিয়ার স্বামী হতদরিদ্র হাতেম আলী হাওলাদার মালিপাড়া স্লুইজের সামনে খাস জমিতে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতেন। প্রায় ১৪ বছর আগে তিনি বিভিন্ন রোগে ও শোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে রিজিয়ার দিনমজুর ৩ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে হাবিল এর সংসারে থাকতেন। সে ছেলেও দেড় বছর আগে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। বাকি দুই ছেলে মাইন উদ্দীন ও শহিদুল খুবই অসহায় থাকায় ওই বিধবা পুত্রবধুর অভাবের সংসারেই অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে রিজিয়ার।

সরেজমিনে দেখা যায়, রিজিয়া এখন বয়সের ভারে ন্যুয্য। লাঠি ভর দিয়ে দিয়ে মোটামুটি হাঁটাচলা করতে পারেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দুই হাতের আংগুলগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। যার কারণে হাত দিয়ে খাবার-দাবারও ভালো ভাবে ধরে খেতে পারেন না। বড় ছেলে হাবিল মারা যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে ছেলের বউ জেসমিন বেগম ছোট্ট সেই বাসার সামনে একটি চা ও পানোর দোকান দেয়। ওই দোকানে সবসময়ই বসে থাকেন রিজিয়া। রিজিয়া তার পুত্র বধু জেসমিনকে নিয়ে চায়ের দোকান দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালালেও মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ। জেসমিনের ছোট ছোট ৩ সন্তানসহ ৫ সদস্যের সংসারে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জেসমিন বেগম জানান, ঋন নিয়ে দোকান দিয়ে ছিলাম। করোনা মহামারির এই সময়ে দোকানপাট সব কিছু বন্ধ। ধারদেনা করে কোনভাবে জীবন চলে। এখন ঋণ শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছি। আমার শাশুরি বয়সের কারনে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারে না। সরকারি বা বেসরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা থাকলেও আমার শাশুরি এ পর্যন্ত কিছুই পাইনি। যদি তার একটি বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা হতো, তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম।

বৃদ্ধ রিজিয়া বেগম আরো বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার দের কাছে অনেক বার বলছি। তারা বয়সকো ভাতায় নাম দিবে বলে চলে যায়। আর আসে না।

বড়বগী ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর মিয়া বলেন, রিজিয়ার মত এমন অনেক বৃদ্ধা নারী আছে যারা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিন্তু এলাকার মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির কারণে এসব অসহায় মানুষরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বি ত হচ্ছে। বর্তমানে বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। কিছুদিন পর মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হবে।

তালতলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতার নাম নেওয়া হচ্ছে না। রিজিয়া বেগমের আইডি কার্ড উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমা দিয়ে গেলে পরবর্তীতে বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার নাম নেওয়া হলে তার আইডি কার্ড দেখে যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225