, , , ,

আমতলীতে বিআর-২৩ ধানের বীজ সংঙ্কট। দিশেহারা কৃষক। ৩৬০ টাকার ধান ৪৫০ টাকা

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
আমতলীতে আমনের বিআর-২৩ ধানের বীজ ধানের তীব্র সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বীজ মজুদ রেখে বেশী মুল্যে ধান বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের। বৃহস্পতিবার অন্তত কয়েক শতাধিক কৃষক উপজেলার শহরের ডিলারদের কাছে ধর্না দিয়েও বীজ ধান না পেয়ে খালি হাতে বাড়ী ফিরে গেছেন। দ্রুত অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ধান বরাদ্দের দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, আমতলীতে এ বছর আমন চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে বিআর ধানের লক্ষমাত্রা ৪ হাজার ৩’শ ৪০ হেক্টর।
ওই জমির আবাদের জন্য বীজ ধান প্রয়োজন ৫’শ ৮০ মেট্রিক টন। উপজেলার মোট জমির অর্ধেক বীজ কৃষকরা মজুদ রেখে থাকেন। অবশিষ্ট অর্ধেক জমির জন্য দুই’শ ৯০ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। ্এর মধ্যে বিআর-২৩ ধানের বীজের চাহিদা ১’শ ৩০ মেট্রিক টন। আমতলী কৃষি অফিস দুই’শ ৯০ মেট্রিক টন আমন ধানের বীজ বরাদ্দ চেয়ে পটুয়াখালী বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে চাহিদা পাঠিয়েছে। কিন্তু বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ৪০ মেট্রিক টন বিআর-২৩ বীজ ধান সরবরাহ করেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। এতে বীজ সংঙ্কটে পরেছে উপজেলার কৃষকরা। উপজেলার ডিলার ও বীজের দোকানে বিআর-২৩ ধানের বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষকরা। আষাঢ় মাসের শেষ এবং শ্রাবনের শুরুতে আমনের বীজতলার জন্য বীজের চাহিদা রয়েছে। শেষ মুহুর্তে বিআর-২৩ ধানের বীজের জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে কৃষকরা। কৃষকরা অভিযোগ করেন অসাধু ডিলাররা বিআর -২৩ ধান বীজের কৃত্রিম সংঙ্কট তৈরি করে বেশী মুল্যে ধান বিক্রি করছেন। তারা আরো বলেন, ৩৬০ টাকার ধান ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছেণ তারা। এদিকে বীজ ধানের সংঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কোম্পানীর ধান বেশী দামে বিক্রি করছে। তারা ৭০০ টাকার ধান ৯০০ টাকার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষক কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার আমতলী পৌর শহরের বাঁধঘাট চৌরাস্তায় তালুকদার টেডার্স, আরিফ স্টোর, মামুন স্টোর, হাওলাদার টেডার্স ও ডিলারের দোকানের সামনে অন্তত শতাধিক কৃষক ধানের জন্য ঘন্টার ঘন্টা অপেক্ষা করতে দেখাগেছে। ধান না পেয়ে তারা খালী হাতে বাড়ী ফিরে গেছেন।
চাওড়া বেতমোর গ্রামের কৃষক বাবুল আকন বলেন, তালুকদার ট্রেডার্স থেকে ৩৬০ টাকার এক বস্তা (১০ কেজি) ধান ৪৫০ টাকায় ক্রয় করেছি। তালুকদার টেডার্সের মালিক মৃনাল তালুকদার বেশী দামে ধান বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, বিএডিসি যে ধান দিয়েছিল তা বিক্রি হয়ে গেছে।
কুকুয়া গ্রামের কৃষক বজলু প্যাদা, আলতাফ খাঁন ও বাবুল সিকদার বলেন, দুইদিন ঘুরেও বিআর-২৩ ধানের বীজ পাইনি। ডিলার মৃণাল তালুকদারের দোকানে ধান রয়েছে কিন্তু বলে ধান নেই। গোপনে বেশী দামে ধান বিক্রি করছেন।
বৈঠাকাটা গ্রামের জাহাঙ্গির খাঁন বলেন, দুই বস্তা ধানের জন্য আমতলী পৌর শহরের সকল দোকানে হন্য হয়ে ঘুরেও পাইনি।
নারী চাষি ফরিদা বেগম বলেন, কি কমু এক বোস্তা ধান হারা বোন্দরে খুইজ্যাও পাইনাই। দোহানদারেরা আইজ আইবে কাইল আইবে বলে ঘুরায়। কি হরমু দিশা পাইনা।
নাচনাপাড়া গ্রামের কাদের প্যাদা, কামাল, হানিফ মীর ও ইউসুফ বলেন, বিআর-২৩ ধানের বীজের জন্য তিন দিন ধরে ঘুরতেছি কিন্তু পাইনা। গোপনে ডিলাররা বেশী দামে ধান বিক্রি করছে। তারা আরো বলেন, ডিলার নাজমুল হাওলাদার ধান দেয়ার কথা বলে তিন দিন ঘুরাচ্ছেন কিন্তু দিচ্ছেন না । আজ দোকান বন্ধ করে রেখেছে।
হাওলাদার টেডার্সের মালিক ডিলার নাজমুল হাওলাদার ধান গুদামজাত করে বেশী মুল্যে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিএডিসি ৮ মেট্রিকটন ধান দিয়েছিল তা বিক্রি করেছি। ধান নেই তাই কৃষকদের যন্ত্রনায় দোকান বন্ধ করে রেখেছি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, আমতলীতে বিআর-২৩ জাতের ধান বীজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আগামী শনিবার ১০ মেট্রিক টন ধান আসবে। ওই ধান আসছে যথা নিয়মে চাষিদের মাঝে বিক্রি করা হবে। তিনি আরো বলেন, কেউ ধানের দাম বেশী নিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225