, , , ,

বরগুনায় ক্লাস শুরুর আগেই ভাঙ্গা হচ্ছে ভবন” শিক্ষার্থীরা বিপাকে

বিশেষ প্রতিবেদক, বরগুনাঃ

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি আগামী ১২ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই বরগুনায় পুরনো স্কুল ভবন ভেঙে নিলামে দেওয়া হয়েছে।

নতুন ভবন নির্মাণের কাজ কবে শুরু হবে তাও জানেন না ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকরা। জেলার প্রায় অর্ধশত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। এতে বিপাকে পড়েছে কয়েক হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার কথা থাকলেও ভবনশূন্য এসব বিদ্যালয়ে কীভাবে পাঠদান করা হবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

করোনাকালে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর গাফিলতির কারণে ভবন সংস্কারের কাজ ঝুলে থাকায় এমন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও অভিভাবক।

বরগুনা শহরের চরকলোনি এলাকার সরকারি হামিদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নিলামে বিক্রি হওয়া দুটি স্কুল ভবন ভাঙার কাজ চলছে।

পাঠদানের বিকল্প কোনো ভবনও নেই এখানে। ছোট্ট একটি টিনের ঘর থাকলেও সেখানে পাঠদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। স্কুলটির শুধু পঞ্চম শ্রেণিতেই ৭৮ জন এবং সব মিলিয়ে ৩৪৫ শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এই বিদ্যালয়টির মতো শুধু বরগুনা সদর উপজেলাতেই বিভিন্ন এলাকার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন নিলামে দেওয়া হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। নিলাম কিনেই নিলাম ক্রেতারা সব ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছেন।

কবে এসব ভবনের নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হবে, আর কবে তা শেষ হবে তা নিয়ে এখন সংশয় প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

চরকলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার জানান, নতুন ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। অথচ পুরনো ভবন নিলামে দেওয়া হয়েছে মাত্র সাত-আট দিন আগে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও যথাসময়ে তা করা হয়নি। এ কারণে এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী।

এ ছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বাঁশবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুপতি মনসাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইঠা লবণগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ ইটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিলাম ক্রেতাদের কেউ পুরনো ভবন ভেঙে নিয়ে গেছে। কেউবা এখনও তা ভাঙার কাজে ব্যস্ত। এসব বিদ্যালয়সমূহের সংশ্লিষ্ট শিক্ষাকর্মকর্তা, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে ভবন নির্মাণে কত সময় লাগবে এবং সেই পর্যন্ত কীভাবে পাঠদান করা হবে এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পাননি তারা।

পাথরঘাটার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম হায়দার জানান, উপজেলায় কমপক্ষে ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নেই। ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে এসব বিদ্যালয়ে বিকল্প টিনশেড ঘর তোলা হয়েছে।

তবে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব বিদ্যালয়ে কীভাবে পাঠদান করা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা এখনও তারা পাননি। একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে জেলার অন্যান্য উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এমএম মিজানুর রহমান জানান, তারা জেলার সকল স্কুল পরিদর্শন করছেন।

উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে নিয়মিত সভা করা হচ্ছে। পাঠদানের বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পাননি বলেও জানান তিনি।

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিয়া শারমিন জানান, ভবনশূন্য বিদ্যালয়গুলোতে শিগগিরাই অস্থায়ী ঘর তুলে দেওয়া হবে। সেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা হবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, এসব সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে।

বিকল্প শেল্টার নির্মাণ করে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করা যায় সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225