স্টাফ রিপোর্টারঃ
সহায় সম্বল বলতে একটুকরো জমি ও গোয়ালের ২টি গরু বিক্রি করে ২০২০ সালের প্রথম দিকে কচুপাত্রা বাজারে খালের পাড়ে একটি ছোট্ট দোকান ঘর তুলে ব্যবসা করছিলেন জামাল। বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্যেও গত দেড় বছর ধরে ব্যবসায় পরিবার পরিজন নিয়ে মোটামুটি চলে আসছে। কিন্তু সরকারি খাস জমিতে অবৈধ দোকান ঘর তোলার অভিযোগে গত বুধবার সেই দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। দোকান হারিয়ে জামাল এখন পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জামাল শুধু একা নয়, এমনিভাবে অবৈধ দখলের নামে তার মতো আরো ১২৩ জন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের ঘরবাড়ী উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন এ সকল ব্যবসায়ীরা
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কাওসার হোসেনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযানে নিয়োগ করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর আহম্মদ গত ৮ সেপ্টেস্বর উপজেলার কচুপাত্রা বাজারের সংযোগ সড়কের খালের পাড়ের পাশের ১২৩ দোকানঘর ও বাসবাসরতদের উচ্ছেদ করেন। একটি সূত্র জানায় উচ্ছেদের পর বের হওয়া খালের পাড়ের ও খাস জমিতে সরকার আপাতত কিছুই করছেনা সরকার। এরপরেও কচুপাত্রা বাজারকে ধ্বংস করে ১২৩ দোকানঘর ও বাসবাসরতদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
দোকান হারানো ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, একটি কুচক্রী মহল এসব ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের জন্য উঠে পরে লেগেছিল। অবশেষে তারা সফল হয়েছে। তাদের এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। জমি বিক্রি, ব্যাংক ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তারা ব্যবসা করতেন। দোকানের ব্যবসার আয় থেকেই তাদের সংসারের যাবতীয় সব খরচ ও ব্যাংক ঋণ দিতেন। জীবন বাচানোর শেষ সম্বল হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব। ব্যাংক ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা সন্তান-সন্তাতি ও পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন বাঁচানোর চিন্তা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কচুপাত্রা বাজারের খালের দুই পাড়ে কয়দিন আগেও সারি সারি দোকান ছিল। কিন্তু এখন আছে শুধু ধ্বংসাবশেষ। স্থানীয়দের মাঝে এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাছাড়া দ্রুত পূর্নবাসনের দাবিও জানাচ্ছেন তারা। এদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে কচুপাত্রা বাজার কমিটির সভাপতি সেলিম মৃধা বলেন, শতবর্ষী এই বাজারের খালের দুই পাড়ের ১২৩ টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে এখানকার ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। এদের দ্রুত পুনর্বাসন করা একান্ত জরুরী।
কচুপাত্রা খালকে দূষণমুক্ত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তালতলীর ইউএনও মো. কাওসার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, কচুপাত্রা বাজারের ১৬৮ শতাংশ ভূমি দখলমুক্ত করেতেই ১২৩ টি বিভিন্ন পাঁকা/কাঁচা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এতে খালের স্বাভাবিক প্রবাহমানতা ফিরে আসবে। দখলদারদের বারবার নোটিশ দিলেও তারা এখান থেকে সরে জায়নি। তাই আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে।