, , , ,

গোমস্তাপুরে টাকার অভাবে দুইবোনের চিকিৎসা  বন্ধ” মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালোরছে

কাবিরুল ইসলাম গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

দুই বোন মরিয়ম ও ফাতেমা। একজনের বয়স ৩৫, অন্যজনের ৩৩। দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের হাঁটা-চলারও শক্তি নেই। এর মধ্যে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা ধরনের রোগ। এই দুই মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এরই মধ্যে জায়গা-জমি বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব তাদের পরিবার। একটি বাড়ি ছিল তাও এখন ব্যাংকের কব্জায়।

বলছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকার আবদুল লতিফের মেয়েদের কথা। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী লতিফ আগে মাছের ব্যবসা করলেও এখন তিনি রেলওয়ে কুলির কাজ করছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দিতে না পারায় একমাত্র বাড়িটিও এখন ব্যাংকের অধীনে। এরই মধ্যে মেয়েদের চিকিৎসার জন্য অনুদান চেয়ে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে আবেদনও করেছেন তিনি।
আব্দুল লতিফ জানান, আমার মেয়ে মরিয়মের বয়স যখন ১৩ বছর তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো। অন্যদের মতো সে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে সে রাস্তায় পড়ে যায়। তখন থেকে সে আর হাটা-চলা করতে পারে না। পরে ধরা পড়লো আমার মেয়ে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তারপর বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরও ভালো হয়নি। কিন্তু অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আর এক মেয়ে ফাতেমার বয়স যখন ১৫ বছর বয়স তখন তারও একই অবস্থা হয়।

তিনি বলেন, তাদের ভালো করতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ঋণ নিয়ে এখন আমি নিঃস্ব। এক বেলা খায় তো আরেক বেলা উপোস থাকি। টাকার অভাবে এখন তাদের চিকিৎসাও বন্ধ। আগে মাছের ব্যবসা করতাম, তখন ভালোই চলতো আমার পরিবার। কিন্তু এখন রহনপুর রেলওয়েতে কুলির সরদার হিসেবে কাজ করি। এই অল্প টাকায় খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি।

আব্দুল লতিফ বলেন, ব্যাংকের পাঁচটি মামলায় এখন নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিচ্ছি। ওই মামলাগুলোতে কখন যে আমাকে আটক হতে হয় সেই চিন্তায় আমার পরিবার দিনাতিপাত করছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বলতে শুধু আমি। আমি জেলে গেলে সংসারের হাল ধরার মতো আর কেউ নেই। কারণ ছেলেরাও এখন দেউলিয়া হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

প্রতিবেশী মাসুদ রানা বলেন, এই পরিবারটি আগে খুব সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করছিল। কিন্তু তাদের দুই মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাদের চিকিৎসার খরচ জোগান দিতে গিয়ে জমি-জমা সব শেষ করেছে। ব্যাংকে ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে তারাও দেউলিয়া হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলাফেরা করছে। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে এখন কিছুই নেই। যে জমি ও বসতভিটা আছে তাও ব্যাংকের জিম্মায়। লজ্জায় অন্যের কাছে হাত পাততেও পারছেন না।

রহনপুর পৌর মেয়র মতিউর রহমান খাঁন জানান, মরিয়ম-ফাতেমাদের পরিবারটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আগে তার বাবা লতিফ মাছের ব্যবসা করতেন। ভালোই চলছিল তাদের। হঠাৎ মেয়েদের চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে পরিবারটি সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমি জানি না। আপনি বললেন- খোঁজ নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225