নওগাঁর রাণীনগর আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার হাতিরপুল নামক স্থানের রতনডারি খালসহ রক্তদহ বিলের চারটি খালের পানি নিষ্কাশনের প্রায় ১২টি সেতু-কালভার্টের মুখ মাটি দিয়ে ভরাট করে। প্রায় এক মাস ১০ দিন আগে রাণীনগর উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয়সভায় সিদ্ধান্তক্রমে স্থানীয় কৃষকদের পাকা ধান বাঁচাতে রক্তদহ বিলের খালের মাটি অপসরণের জন্য নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়। তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় গত সপ্তাহজুড়ে কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে রক্তদহ বিলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো ধান তলিয়ে যাওয়া শুরু করে।
সরকারি কর্তাদের খামখেয়ালিপনার ওপর ভরসা না করে পাকা ধান বাঁচাতে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টর নেতৃত্বে স্থানীয় চাষিরা রক্তদহ বিলে খালের মাটি কেটে দিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করে। এই যাত্রায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো পাকা ধান রক্ষা পায়।
জানা গেছে, রাণীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক নতুন করে পাকাকরণ, প্রশস্ত করাসহ ৪টি সেতু ও ২৩টি কালভার্ট ভেঙে নতুন করে নির্মাণ কাজের দরপত্র দেওয়া হয়। এই কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০৫ কোটি টাকা। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দরপত্র শেষে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথম পর্বে চারটি সেতু, ৬টি কালভার্ট ভেঙে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেতু-কালভার্ট ও সড়ক পাকাকরণ কাজের সময়সীমা প্রাথমিকভাবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৮ মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। শুষ্ক মৌসুম পার হয়ে গেলেও সেতু কালভার্টের কাজ না করে এখন এসে রক্তদহ বিল থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা রতনডারী খাল, রক্তদহ খাল, সিম্বা খাল ও করজগ্রাম খালের মুখসহ ১২টি সেতু কালভার্টের মুখ মাটি দিয়ে ভরাট করে বন্ধ রেখে পার্শ্বে বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করে ধীরগতিতে করা হচ্ছে। উপজেলার মধ্য রাজাপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী, ইয়াছিন প্রাং জানান, এই মাঠে আমাদের জমি আছে। সড়কে কাজ করার কারণে খালের মুখ মাটি দিয়ে ভরাট করায় বৃষ্টির পানিতে বিলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকা ধান বাঁচানোর জন্য আমরা এই খালের বাঁধ কেটে দিয়ে ফসল রক্ষা করেছি।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, এই এলাকার কৃষকরা তাদের ইরি-বোরো পাকা ধান বাঁচাতে আমাকে জানানোর পর বিষয়টি সড়ক বিভাগকে অবহিত করলে তারা জরুরি পদক্ষেপ না করায় চাষিরা নিজ উদ্যোগে ফসল বাঁচাতে ওই খালের বাঁধ কেটে দিয়ে ধান রক্ষা করেছে।
নওগাঁ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক জানান, করোনাভাইরাসের কারণে কাজ পিছিয়ে গেল। তার পরেও সমস্যা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি সেতু-কালভার্টের মুখে মাটির নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ দেওয়া আছে।#