আধুনিকায়ন করা হচ্ছে ঈশ্বরদী ঐতিহ্যবাহী জংশন স্টেশনকে। এই জংশন স্টেশনে এক সঙ্গে ১৮টি কোচ দাঁড়ানোর জন্য রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মিটার গেজ ও ব্রডগেজ (ডুয়েল) লাইনের জন্য দুই পাশে সম্প্রসারণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। রেলওয়ে পাকশি বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রেলওয়ের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটি গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া পড়েনি এ জংশন স্টেশনে। পুরাতন বিল্ডিং, ট্রেনের উচ্চতার চেয়ে কয়েক ফুট নিচু প্লাটফর্ম, ছাউনি ফুটো, যাত্রীদের বিশ্রামাগারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী টয়লেট, যাত্রীদের বসবার স্থান সংকট, লাইনগুলো অতি পুরাতন ও নড়বড়েসহ মাদকাসক্ত, চোর, ছিনতাইকারী, প্রতারকসহ নানা অসামাজিক কর্মকান্ডের নিরাপদ আশ্রয় ছিল ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।
২০১৯ সালের ২২ জুন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সেই সময় স্টেশনে উপস্থিত স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ট্রেনযাত্রীগণ স্টেশনের সমস্যাগুলো মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে স্টেশনটিতে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজারকে (জিএম) নির্দেশ দেন।
সেই নির্দেশনা মতেই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে (আরএনপিপি) রেললাইন নির্মাণ, নতুন স্টেশন স্থাপন, রেললাইন সংস্কার ও সমপ্রসারণ কাজের পাশাপাশি ঈশ্বরদী প্লাটফর্মে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য প্লাটফর্ম সংস্কার, একই সঙ্গে ১৮টি কোচ স্টেশনে দাঁড়ানোর উপযোগী করতে সম্প্রসারণ, ট্রেন থেকে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের খুব সহজেই নামার সুবিধার্থে প্লাটফর্ম উঁচুকরণ, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক টয়লেট, বসার স্থান, বিশ্রামাগারসহ রেলওয়ের স্টেশনটিকে কম্পিউটারাইজড ও ডিজিটাল ইয়ার্ড, নতুন সিগন্যাল ভবন নির্মাণ ও সিগান্যালকে ডিজিটালাইজডকরণসহ নানামুখী উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর এই কাজটি ক্যাসেল কন্সট্রাকশন লি. অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার লি. জয়েন্ট ভেঞ্চার কম্পানির মাধ্যমে করা হচ্ছে।
সরেজমিনের ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রুপভিত্তিতে শ্রমিকরা কাজ করছেন। একই সঙ্গে রেললাইন সম্প্রসারণ, পুরাতন রেললাইন সংস্কার, যাত্রীদের বসার স্থান নির্মাণ ও সংস্কার, শেড মেরামত, প্লাটফর্মকে সকল বয়সী ও রোগীদের ট্রেনে ওঠানামার জন্য উঁচু করা, আধুনিক সিগন্যাল ভবন, উন্নতমানের টয়লেট নির্মাণ কাজ চলছে।
কাজ তদারককারী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আবু তৌহিদ সুমন জানান, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের উন্নয়ন কাজগুলো স্ট্যান্ডার্ড মানের করা হচ্ছে। কাজে ব্যবহৃত রড, বালু, পাথর, সিমেন্ট ল্যাব টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।
রেলওয়ে পাকশি বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) জানান, এ স্টেশনসহ সব স্টেশনেই যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের জন্য নানামুখী উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যেই স্টেশনটি আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী সুযোগ সুবিধাজনক করে তোলার কাজ চলছে।
দীর্ঘদিন পর হলেও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে নতুন রেলপথ স্থাপন, লাইনের সংস্কার, প্লাটফর্মের আধুনিকায়ন, প্লাটফর্ম ও শেডের সংস্কার, যাত্রীদের বিশ্রাম, বসার জায়গা, আধুনিক টয়লেট, সিগন্যাল, রেলওয়ে ইয়ার্ড কম্পিউটারাইজড নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দীর্ঘদিন পর হলেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রেলওয়েতে যাতায়াতকারী যাত্রীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। ##