আদালতের রায় উপেক্ষা করে সালথায় বিদ্যালয়ের গ্রন্থগারিককে জোরপূর্বক অপসারণের অভিযোগ

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যোগারদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থগারিক (ভলেন্টার) মো. টুটুল শেখকে জোরপূর্বক অপসারনের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিদ্যালয়ের সদ্য অবৈধ সভাপতি কামাল মোল্যার বিরুদ্ধে। গত ২২ জুন কামাল মোল্যা সল্প সংখ্যক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য উপস্থিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে কোন প্রকার বিজ্ঞাপন ছাড়াই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রভাবশালী যুবক ফরহাদ হোসেন  (সোহেল রানা) নামে একজনকে বিদ্যালয়ের প্যাডে রেজুলেশন করে তাকে নিয়োগ দেয়।

 

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মরহুম আবু জাফর মোল্যা ২০১৪ সালে যখন সভাপতি ছিলেন তখন সহকারী গ্রন্থগারিক (ভলেন্টার) হিসাবে নিয়োগ দেন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের যোগারদিয়া গ্রামের টুকু শেখ এর ছেলে মো. টুটুল শেখকে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি ভালো ভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালে বিদ্যালয়ের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন সংস্লিষ্ট ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবু মোল্যা। তিনি এসে অস্থায়ী নিয়োগ বাতিল করে সরকারী বিধিমোতাবেক বিজ্ঞাপন দিয়ে নতুন নিয়োগ দিতে গেলে ওই গ্রন্থগারিক টুটুল শেখ আদালতের শরনাপন্ন হন। পরবর্তীতে আদালত ওই নিয়োগ স্থগিতের আদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় জটিলতার কারনে কোন কোন সময় সে স্কুলেও যেতে পারেনি। তাকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতিও দেখানো হয়েছে। কোন রকম ২০২০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে এসেছে টুটুল।

গত কয়েক মাস আগে বিদ্যালয়ের সভাপতি জাফর মোল্যা মারা গেলে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন তারই চাচাতো ভাই কামাল মোল্যা। তিনি এসে তার দলবল নিয়ে ওই গ্রন্থগারিক টুটুলকে মারধর করে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে সে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে কোন সুরাহা না পেলে তিনি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

 

টুটুল অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪ সালে আমি সহকারী গ্রন্থগারিক (ভলেন্টার) পদে নিয়োগ হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছি। বিদ্যালয়ের সভাপতি আবু জাফর মোল্যা দেড় মাস আগে মারা যাওয়ার পর কয়েকদিন আগে অবৈধ সভাপতি কামাল মোল্যা এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে তার দলবল নিয়ে বিদ্যালয় থেকে মারধর করে বের করে দেয়।

এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করতে পারেনি তাদের প্রভাবের কারনে। কামাল মোল্যা বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে এখনও শিক্ষা বোর্ড থেকে কোন অনুমতি পায়নি অথচ আমাকে জোরপূর্বক বাদ দিয়ে পূণরায় সহকারী গ্রন্থগারিক পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি আমার চাকুরী ফেরৎ চাই,  কর্মে যোগ দিতে চাই। আমি যাহাতে স্বপদে বহাল হতে পারি সেই জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি কামাল মোল্যা বলেন, আমার চাচাতো ভাই তৎকালীন সভাপতি জাফর মোল্যা টুটুল শেখকে সহকারী গ্রন্থগারিক (ভলেন্টার) পদে নিয়োগ দিয়েছিলো ঠিক কিন্তু তা চুক্তিভিত্তিক ছিলো চুক্তি অনুযায়ী টুটুল কোন সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেনি। যোগ্যতা অর্জন করতে না পারলে ম্যানেজিং কমিটির কি করার আছে। তাই টুটুলকে বাদ দিয়ে যোগ্যতা সম্পর্ন লোক আমরা নিয়োগ দিয়েছি তাও খন্ডকালীন স্থায়ী নয়। সরকারী বিধিমোতাবেক নিয়োগের সময় সেও প্রার্থী হতে পারবে যদি তার যোগ্যতা থাকে।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, এই পদে নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিনের ঝামেলা স্থানীয় ভাবে জটিলতার কারনে অনেক ঘটনা ঘটেছে। খন্ডকালীন নিয়োগ হিসাবে কতৃপক্ষ একই পদে একাধিক ব্যক্তিও নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু যখন বিধিমোতাবেক  নিয়োগ হবে তখন আর এই সুযোগ থাকবে না। এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন লোক সভাপতি পদে এসে  নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা করে। স্থানীয় ক্ষমতাবলের কারনে আমাদের তা মেনে নিতে হয়।

 

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন, খন্ডকালীন ভাবে যে কাউকে নিয়োগ ম্যানেজিং কমিটি দিতে পারে। কিন্তু যখন সরকারী বিধিমোতাবেক নিয়োগ হবে তখন আর এই সুযোগ থাকেবে না। আর খন্ডকালীন একজনকে নিয়োগ দিয়ে আবার তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ম বর্হিভূত। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, যোগারদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু জাফর মোল্যা মারা যাওয়ার পরে বিদ্যালয়ের কে সদ্য সভাপতি হয়েছে, এ খবর আমার কাছে নাই। কে কাকে সভাপতি বানালো, কিভাবে বানালো তা কিছুই জানি না। নতুন করে সহকারী গ্রন্থগারিক নিয়োগের বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225