ঘিওরে কালীগঙ্গা নদীতে বালু-মাটি উত্তোলন: বসতবাড়ি-রাস্তা-জমি নদীগর্ভে বিলীন

মানিকগঞ্জের ঘিওরের কালীগঙ্গা নদীতে ড্রেজার (বুলগেট) বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। সে কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর, কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি, এক কিলোমিটার রাস্তা, একটি ব্রিজ ও মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর, জমিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা।স্পর্শকাতর ও বিপদজনক হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করে  ড্রাম ট্রাক দিয়ে বিক্রি করছেন।

অবৈধভাবে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধ করে ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালীগঙ্গা নদীর উত্তর তরা এলাকায় বেশ কয়েকটি ড্রেজার (বুলগেট) বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর পাড়ের বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাকি অংশও ভাঙনের মুখে।

কেল্লা গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। সে কারণে কেল্লা, নকিববাড়ি ও উত্তর তরা গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর, কয়েকশত বিঘা ফসলি জমি, এক কিলোমিটার রাস্তা, একটি ব্রিজ, একটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর, জমিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। আমরা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

একই গ্রামের মহিদুর রহমান, মিজানুর রহমান বলেন, ‘নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে গত কয়েক বছরে আমার ১০ বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এবার বর্ষা মৌসুমেও দুই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাড়িটাও হুমকির মুখে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।’

আব্দুল আলিম বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার বাড়ি নদীতে গেছে। আমি এখন যেখানে বাড়ি করেছি, সেটাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাঁচার জন্য বহু যায়গায় ঘুরছি। কেউ কোনো ব্যবস্থা নিলো না। এখন আমাদের মরা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’

উত্তর তরা গ্রামের সামসুদ্দিন সামসু বলেন, ‘নদী থেকে ড্রেজার সরানোর জন্য প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কোনো লাভ হয় নাই। এখন রাস্তায় নেমে দাবি আদায় করতে হবে।’

এলাকাবাসী জানান, নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু, মাটি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন নদী ভাঙনকবলিত কেল্লা, উত্তর তরা ও নকিববাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। কোটাই বাজারে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন ওই তিন গ্রাম এবং আশপাশের এলাকার শতাধিক মানুষ। যাথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কালীগঙ্গা নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন বন্ধ এবং মাটি-বালু খেকোদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করার পর তদন্ত করা হয়েছে। সেখানে ইজারাদাররা বুলগেট বসিয়ে নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করছেন। কিন্তু, রাতের আধাঁরে ইজারাভুক্ত এলাকার বাইরে বালু বা মাটি উত্তোলনের অভিযোগটিও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ যাতে নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করতে না পারে এবং এর ফলে যাতে নদীভাঙন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমরা নজর রাখছি।’

 

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225