বিশেষ প্রতিবেদক, বরগুনাঃ
বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে ৫ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসিরের বড়ভাই মো. ছগীর হোসেন বাদী হয়ে ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৫ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেছেন।
বরগুনা থানার ওসি তারিকুল ইসলাম মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তারা গ্রেফতার করেছেন।
বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দু’পক্ষের হামলা পাল্টা হামলায় উভয়পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুত্বর ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নৌকা প্রতীকের পার্থী অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার মনসাতলী নামকস্থানে আমার নির্বাচনী ক্যাম্পে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ বারী বাদলের ইন্ধনে তার সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালায়। পরবর্তীতে আমি আমার কর্মীদের নিয়ে এম এ বারী বাদলের বাড়ির সামনে দিয়ে উঠান বৈঠকে যাওয়ার সময় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য করে এবং আমার সাথে থাকা কর্মীদের ওপর পুন:রায় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় এম এ বারী বাদলের কর্মী সমর্থকরা। এ সময় আমাকে আমার কর্মীরা নিরাপদে রাখতে সরিয়ে নিয়ে যায়। তবে আমার সাথে থাকা ৪ কর্মী গুরুত্বর জখম হন। পরে রাত ১০টার দিকে এম এ বারী বাদলের বাড়ির সামনে দিয়ে ফেরার পথে পুন:রায় হামলা চালায় তার কর্মী সমর্থকরা। এসব ঘটনায় আমার অন্তত অর্ধশতাধিক কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে গুরুত্বর জখম ৮ জনকে বরগুনা সদর হাসপাতাল এবং একজনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। বাকীরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন, শাখাওয়াত হোসেন (৩৬), মো: সোহাগ মৃধা (২৫), সোহাগ হাওলাদার (২৪), বশির সিকদার (২৫), আবু হানিফ (৪০), সাবু (২৮), রিপন হাওলাদার (৪০), আলমগীর (৩৫) এবং মো: কামাল (৩০)।
নাজমুল ইসলাম নাসির আরও অভিযোগ করে বলেন, এম এ বারী বাদল বর্তমানে আওয়ামী লীগ দাবি করলেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত এবং বিএনপি জামাতের মদদ পুষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। তিনি এলাকায় সন্ত্রাসীর রাজ্য কায়েম করার চেষ্টা করছেন। এমনকি ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের কিছু নেতারাও নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তারা গোপনে এম এ বারী বাদলকে এসব কর্মকান্ডে সহযোগিতা করছেন। নাজমুল ইসলাম নাসির দায়িত্বরত পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় সদর উপজেলার বাবুগঞ্জ পুলিশ ফাঁরির দায়িত্বরত ইনচার্জ মো: ফরিদ উদ্দীনের দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) এম এ বারী বাদল বলেন, সন্ধ্যার পরে আনারসের কর্মীরা মিছিল নিয়ে লাকুরতলা নামকস্থানে যাওয়ার পথে মনসাতলী নামকস্থানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা অতর্কিত হামলা করে। পরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসিরের নেতৃত্বে আমার বাড়ীতে হামলা করার চেষ্টা করলে আমার কর্মী সমর্থকরা তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় আমার ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী সমর্থক আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে গুরুত্ব আহত ৪ জনকে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন, হানিফ ফকির (৪৫), মোফাজ্জেল ডাক্তার (৬৫), মো: কাওসার (২৬) এবং মো: সাদেম (৭০)। এম এ বারী বাদল জানিয়েছেন, তিনিও মামলা করবেন।
অন্যদিকে এ ঘটনার সময় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী গোলাম সরোয়ার শাহিনের প্রচারকালে একটি রিক্সা এবং মাইক ভাংচুর করা হয়েছে। এতে আব্দুর রহিম (৩২) এবং নাসির উদ্দীন (৩৮) নামে দু’জন আহত হয়েছে।
বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে এম তারিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে তিনি জানান। মামলার বিষয়ে ওসি বলেন, নাজমুল ইসলাম নাসিরের পক্ষে একটি মামলা এজাহার করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া চলমান আছে।
Facebook Comments Box