খান নাঈম, বরগুনা:
বরগুনায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা জেলা ও সদর উপজেলা বিএনপি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ স্থানীয় একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ৯ টায় পৌর মার্কেট ও আল মিজান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারী কর্মীরাসহ সর্বস্তরের জনগণ। পরে একই স্থানে বেলা ১১ টায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা জেলা ও সদর উপজেলা বিএনপি।
জানা যায়, সারা বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগ ডেঙ্গু রোগী বরগুনায়। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। তার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে ৩ জনের এবং বাকিরা অন্যান্য হাসপাতালে।
এদিকে জেলার ১২ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ১০ জন তার মধ্যে ছুটিতে আছেন পাঁচ জন। এসব নানা কারণে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা জেলা ও সদর উপজেলা বিএনপিসহ স্থানীয় একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
এসময় বরগুনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বক্তারা বলেন, বরগুনার জেনারেল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে বরগুনায় তাদের সহকর্মী স্থানীয় উদ্যোক্তা মোনালিসা জেরিন এবং কিশোরী উপমাসহ ১০ জনেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করেছে ডেঙ্গু। যে কোন সময় এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেতে পারে। শত শত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। যার সামাল দেয়া পুরো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হবে না।
প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, সারা বাংলাদেশে যেখানে সাড়ে ৪ হাজার রোগী সেখানে শুধুমাত্র বরগুনা জেলায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বরগুনার সিভিল সার্জন সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকগণ কিছুতেই ছুটিতে যেতে পারেন না। মাত্র ১০ জন ডাক্তার নিয়ে এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানো হাস্যকর। তাই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই বরগুনা প্রেসক্লাবের মধ্যস্থতায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম গঠন করা হয়েছে। করণীয় নির্ধারণে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পৌর প্রশাসনের সাথে একাধিক আলোচনা সভা করা হয়েছে। এতেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। নজিরবিহীন ডাক্তার ও নার্স সংকটের কারণে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ডেঙ্গু মশার ভয়াবহ উপদ্রব এবং বরগুনার চিকিৎসা সেবার অচল অবস্থার কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বরগুনায়। অথচ রাষ্ট্রের মাথাব্যাথা নেই। এভাবে একটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলতে পারে না।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা বলেন, বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বরগুনা পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলেরই দায়িত্বহীনতা রয়েছে। তিনি আরো বলেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচিব কেন বরগুনায় আসলেন না, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কেন আসলেন না তার জবাব দিতে হবে জনগণের কাছে। এসব ব্যর্থতার দায় দিয়ে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এপর্যন্ত জেলায় ১৫শ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ১৫৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। এরইমধ্যে বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার কন্যা উপমা এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদ-এর কন্যা মোনালিসা জেরিনসহ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজনের অকাল মৃত্যুকে শোকের ছায়া নেমে এসেছে জেলাজুড়ে। এরপরেও বরগুনা জেলাকে ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে ঘোষণা না করায় এবং জরুরী ব্যবস্থা না নেয়ায় রাস্তায় নেমেছে বরগুনার সাধারণ জনগণ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.