প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে বগুড়ার আদমদীঘিতে সবকিছুই স্থবির হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে গণপরিবহন ও হাট এবং স্বোচ্ছায় লকডাউন করা হয়েছে অনেক পাড়া-মহল্লা। ফলে দাম কমেছে অনেক নিত্যপণ্য দ্রব্যের। কিন্তু কদর বেড়েছে সান্তাহারের গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাটার।
গাছে গাছে সজনে ফুল আসার শুরুর দিকে আবহাওয়া তেমন একটা অনুক‚লে না থাকলেও এবছর সজনে ডাটার উৎপাদন অনেকটা ভালো হয়েছে। অন্যান্য সবজির চেয়ে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এসব সজনে ডাটা স্থানিয় চাহিদা মিটিয়ে করোনা আতঙ্ক মাথায় নিয়ে সান্তাহারের ব্যবসায়ীরা সরবরাহ করছেন দেশজুড়ে।
উপজেলার সান্তাহার এলাকার পাইকারী সজনে ব্যবসায়ী বাবু হোসেন, বাদশা আলী ও সবুজ হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়, তারা জানান- করোনার কারণে সজনে ডাটায় তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। এখনো সজনে ডাটার কদর অনেকটা গত বছরের মতোই রয়েছে। সান্তাহার এলাকাঘুরে কৃষকদের কাছে থেকে প্রতিমন ১৬শ টাকা অর্থাৎ কেজি প্রতি ৪০টাকা দরে সজনে কিনতে হচ্ছে।
আর এসব সজনে কুষ্টিয়া, নাটোর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে যানবাহনের, সাড়াদেশে সজনে পাঠাতে এখন একমাত্র ভরসা মিনি পিকআপ। তবে ভাড়া আগের থেকে অনেকটা বেশি দিতে হচ্ছে।
তাছাড়া চিকিৎসকদের মতে ক্যালোরিয়াম, খনিজ লবণ ও আয়রনসহ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য সজনে ডাটাতে পাওয়া যায়। এছাড়া ভিটামিন এ,বি ও সি সমৃদ্ধ সজনে ডাটা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি।
গর্ভবর্তী প্রসূতি মেয়েদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ কারি ও ফলদায়ক বলে ঔষধি সবজি হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও এই গাছের ছাল ও পাতা রক্ত আমাশয় প্রতিরোধে কার্যকর ভ‚মিকা রাখে বলে চিকিৎসকেরা জানায়।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, সজনে ডাটা প্রধানত দুই প্রকার। এক প্রকার বছরে ১বার পাওয়া যায়। আর রাইখঞ্জন জাতের সজনে ডাটা বছরে দুই থেকে তিনবার বাজারে পাওয়া যায়। সজনে গাছ তৈরি করতে চারা রোপন করতে হয় না। যে কোনো পতিত জমির পুকুর পাড় রাস্তা বা বাড়ির আঙ্গিনায় বা যে কোনো ফাঁকা জায়গায় গাছের ডাল পুঁতে রাখলেই অবহেলা অযত্নের মধ্যেই প্রাকৃতিকভাবে ধীরে ধীরে এর ডাল-পালা বেড়ে গাছ বড় হতে থাকে।
এমনকি ডাল পুঁতে রাখার পর একবছরের মধ্যেই ওই সব গাছে সজনে ডাটা ধরতে শুরু করে। বড় মাঝারি এক একটি গাছে ৫-১০ মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। বিনা পরিশ্রমে, বিনা খরচে অধিক লাভের আশায় অনেকেই সজনে চাষের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে।