বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
বিজিসি অ্যাওয়ার্ড-২৪ পেলেন আব্দুল মান্নান মার্কিন দূতাবাস থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান তারেক রহমানের ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খালাস পেলেন সাংবাদিক নেতা গোলাম ফারুক মজনু বিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাস আলীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন আশুলিয়ায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও মিজান শাহ্ দরবারে ৫৩ তম মাহফিল অনুষ্ঠিত। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না: তারেক রহমান আবহাওয়ার বৈরীতায় উত্তাল সাগর, ঝড়ের আশঙ্কা

করোনা: মধ্যবিত্তদের দায়িত্ব কার?

লেখক- এরফান আলী / ৩৭২ শেয়ার
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে এ দেশে প্রায় অর্ধেক মানুষই হতদরিদ্র ছিল, যার হার প্রায় ৪৮ শতাংশ ছিল। আর দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত সাড়ে ৮২ শতাংশ মানুষ। নব্বইয়ের দশকের আগ পর্যন্ত এই পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। নব্বইয়ের দশক থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে নানামুখী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নেওয়ায় পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। দারিদ্র্য হটানোর নানা কর্মসূচি আরও বেশি গতি পায় ২০০০ সালের পর। তবে বর্তমানে এই মরণঘাতী করোনা সঙ্কট পেছনের দিকে নিয়ে যাবার অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে বললে ভুল হবে না।
অর্থনীতিবিদদের ভাষায় মধ্যবিত্ত তাদেরই বলবো, যারা নির্ধারিত আয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থাৎ মাস শেষে বেতন পায়। বেতনের বাইরে বিকল্প আর কোনো আয়ের সুযোগ নেই। সন্তানের স্কুল খরচ ও স্বাস্থ্য খরচ বেড়ে গেলে যাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তারাই সমাজে মধ্যবিত্ত। এই সামাজিক বৃত্তের মধ্যে থেকে নিজের জায়গা একটু বাড়াতে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীটির প্রধানত দুটি কারণে বিস্তৃতি ঘটছে বলে অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন। প্রথমত: বাংলাদেশে কৃষির বাইরে কিছু কিছু মানুষ চলে আসছে যারা হয় পড়ালেখা করে চাকরি করছে, না হয় কেউ ব্যবসা করছে, আবার কেউ কেউ স্বাধীন পেশা গ্রহণ করছে। আর দ্বিতীয় কারণ: এখন শুধুমাত্র পরিবারের পুরুষ সদস্যই উপার্জনে যোগ দিচ্ছে না। তাদের সাথে নারীরাও প্রায় সমহারে উপার্জনে অংশ নিচ্ছে।
হ্যাঁ, আমি এতোক্ষণ মধ্যবিত্তদের কথাই বলছিলাম। এখন বলতে চাই করোনা সঙ্কটে কেমন আছেন এ শ্রেণীর মানুষ? তারা কি পাচ্ছে সহায়তা বা কোনো প্রনোদনা? সেটা আমার জানা নেই। তবে সারাদেশে লকডাউনের মধ্যে উচ্চবিত্তরা ঠিকই নিজেদের জমানো টাকায় বেশ আয়েশী ভাবে ঘরে অবস্থান করছেন। আর নিম্নবিত্তরা তো সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি উদ্যোগের ত্রাণ, টিসিবির পণ্যসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছেন। কিন্তু মধ্যবিত্তদের খবর কি কেউ রাখছেন? সেটা হয়তো প্রয়োজন হয় না কারো। কিন্তু প্রশ্ন মধ্যো বিত্তকারা? উত্তরে আমার কাছে মনেহয় মধ্যবিত্ত তারাই যারা দেশে অর্থনীতির চাকা সকল থাকতে কারো কাছে হাত না পেতে সব মুখ বুজে সহ্য করে চলে। কেননা, কারণ ছাড়া বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও তারা এর প্রতিবাদ করেনা। বাড়ির মালিক ভাড়া বৃদ্ধি বা কমানো সংক্রান্ত কোনো গ্রহণযোগ্য সরকারি নীতিমালা না থাকায় ভাড়া বাড়িয়ে দেন। সেখানেও প্রতিবাদ না করে ভাড়ার চাপ সহ্য করেন। কারণ একটায় আত্মসম্মানবোধ আর মধ্যবিত্তের অবস্থান ধরে রাখতে তারা নীরবে নিভ্রিতে এসব সহ্য করে যাচ্ছেন। তবে এ সমাজ ব্যবস্থা মধ্যবিত্তসম্পন্ন মানুষের জীবনে বড় আঘাতহানে। এতো কিছুর পরও তাদের জীবন চাকা থেমে ছিলনা। কিন্তু মরণঘাতী করোনা সঙ্কট যেন বর্তমানে থেমে দিয়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। ফলে অনেক মধ্যবিত্তরা জীবন বাঁচাতে দীর্ঘ লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে নিন্মবিত্ত সেজে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাহলে এ কেমন সমাজ ব্যবস্থা আমাদের? মধ্যবিত্ত কারা আর নিন্মবিত্ত কারা স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কী আমরা তাদের চিনলাম না।
এনিয়ে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মনে করেন, যাদের নূন্যতম থাকার জায়গা আছে, খাবারের জন্য কারো কাছে হাত পাততে হয় না, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছে, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছেন, তাদের মধ্যবিত্তের কাতারে ফেলা যেতে পারে। আবার কোন কোন সমাজ বিজ্ঞানী পেশা বিবেচনা করে এর শ্রেণিবিন্যাস করেছেন- নির্দিষ্ট কিছু পেশার লোকজনকে মধ্যবিত্তের কাতারে ফেলেছেন আর শ্রমজীবীদের নিম্নবিত্তের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তবে এ পদ্ধতির বেশ সমালোচনাও রয়েছে।
যা হোক আলোচনা সমালোচনা যতই থাকুক না কেন সমাজে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বিশেষ অবদান রয়েছে। মধ্যবিত্তদের একটি বৃহৎ অংশ সরাসরি কৃষির সাথে জড়িত এবং রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।
এই ক্রান্তিকালে বিশাল এই শ্রেণির মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করি। কেননা এতবড় একটি শ্রেণিকে অভুক্ত রেখে দেশ ও জাতি ভালো থাকতে পারে না। আর সেটা শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের জরুরী ভিত্তিতে এ দায়িত্ব নিতে হবে। #

লেখক- এরফান আলী
পরিচালক, মৌসুমী উকিলপাড়া নওগাঁ।

 

সেরা দেশ/তইজ/কলাম

Facebook Comments Box


এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
Developed by: Agragamihost.Com