এফ এম আজিজুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথায় অতিবৃষ্টির কারনে বিভিন্ন নিচু এলাকার পাটক্ষেতে জমেছে পানি তলিয়ে যাচ্ছে ক্ষেত, কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা। “সোনালী আঁশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর” পাটের জন্য বাংলাদেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলা শ্রেষ্ঠ তাই এই উপাদি। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া পাটের প্রতিকুলে থাকায় ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ বছর উপজেলার কৃষকেরা ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেছেন।
মাঠে মাঠে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে পাট গাছ। ঠিক সেই মূহুর্তে অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন নিচু এলাকার পাটের জমি তলিয়ে গেছে। একটি পাট গাছ ৬ থেকে ৯ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। কিন্তু কিছু কিছু নিচু এলাকার জমিতে ২ থেকে ৩ হাত লম্বা হলেই পাট গাছের গোড়ায় পানি জমেছে। ফলে আর বাড়তে পারছেনা পাট গাছ, পাটের গোড়ায় জড় ধরে গেছে। রোদ হলে পানি শুকিয়ে যেত, পাট গাছ বেড়ে উঠার সুযোগ পেত। কিন্তু বৃষ্টির পর বৃষ্টি হওয়াতে পানি শুকাতে পারছে না। ফলে পাট গাছের গোড়ায় পচন ধরে গাছ মরে যাচ্ছে।
যে সব এলাকা উচু সেখানে মোটামুটি পাট গাছ বেড়ে উঠছে। তারপরও অতিবৃষ্টির কারনে বিভিন্ন রকমের পোকা আক্রমন দেখা যাচ্ছে । পাটের ডোগা ও পাতা খেয়ে ফেলছে পোকায়। উপজেলা পাট উন্নয়ন অফিস ও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও কিটনাশক প্রদান করা হচ্ছে। যে সব জায়গায় পাট তলিয়ে গেছে সেই সব জায়গায় গিয়ে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা পরিদর্শন করছেন। যেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে সেখানে স্থানীয়দের পরামর্শে তা নিষ্কাশন করা হচ্ছে। তারপরও যেন কৃষকের এই ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে পারবে না।
গট্টি ইউনিয়নের রাহুত পাড়া গ্রামের কৃষক মান্নান মোল্যা জানান, তার প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তার মধ্যে ৬ বিঘা জমিতেই পাটের গোড়ায় পানি জমে ২/৩ হাত লম্বা হয়ে আর বাড়ছে না। পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার সারা বছরের সম্বল এই পাট নষ্ট হয়ে গেল আমার সংসার চলাতে সমস্যা হবে। বড় লক্ষনদিয়ার পাট চাষী কামরুল ইসলাম বলেন, আমার ৪ বিঘা পাটের জমি প্রথমে শীলে মাথা ভেঙে নষ্ট হয়েছে আবার এখন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি সহ ওই মাঠে আরো প্রায় ২০/৩০ বিঘা জমিতে পানি জমে পাটের গোড়া পচে যাচ্ছে। কৃষকরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাটক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হচ্ছে পাট দিশেহারা কৃষক।
উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারি জানান, উপজেলা ১২ হাজার ৪০হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া পাটের প্রতিকুলে থাকায় প্রথমে শিলা বৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। আবার এখন অতিবৃষ্টিতেও তলিয়ে যাচ্ছে নিচু এলাকার পাটক্ষেত। যেসব জমির পাট তলিয়ে যাচ্ছে আমরা তা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করছি। তালিকা তৈরি করে জেলা দপ্তরে প্রেরন করবো। তা ছাড়া আমরা পাট বীজ বোপন করার সময় ৩ হাজার কৃষককে বীজ ও সার দিয়েছিলাম। কত হেক্টর জমি পানিতে তলিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছি। পুরো এলাকা পরিদর্শন শেষ হলে সঠিক হিসাব দিতে পারবো।
উপজেলা কৃষি অফিসার জীবাংশু দাস বলেন, পাট উৎপাদনে আমাদের মাঠ কর্মীরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে। ভারী বৃষ্টির কারনে নিচু জমির পাটক্ষেতে পানি জমে পাট নষ্ট হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া পাটের প্রতিকুলে তাই নানান সমস্যা পাট চাষীদের। তারপর যাতে করে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি না হয়, সেই লক্ষে বিভিন্ন ভাবে আমরা কৃষকের পাশে থাকবো।