শুভংকর পোদ্দার, হরিরামপুর,মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে জমে উঠেছে নৌকা বিক্রির হাট। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম এখন ঝিটকার নৌকার হাট। নয়নাভিরাম এই নৌকার পসরা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। সপ্তাহের প্রতি শনিবার ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিকিকিনি হয় নৌকার।
বর্ষার মৌসুম এলেই বাড়তে থাকে নদ-নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তলিয়ে যায় পদ্মা ও ইছামতী নদী পাড়ের নিচু এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট। এসময় নদী পাড়ের নিচু এলাকার মানুষগুলোর যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে ডিঙ্গি নৌকা।
সরেজমিনে শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চবিদ্যালয় মাঠের অর্ধেকটা জুড়ে সাঁড়ি সাঁড়ি বিভিন্ন সাইজের নৌকা। যা বেচাকেনা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
নৌকা হাটে আগত নৌকা তৈরির কারিগর ও বিক্রেতা মাশাইল গ্রামের ওহাব বেপারী এ প্রতিবেদককে বলেন, চাম্বল, মেহগিনি, কড়ই, রেইনট্রি, গুলাপ, ডুমরা, শিশু প্রভৃতি গাছের কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করেন। এছাড়া গতবছরের তুলনায় নৌকা প্রতি ২শত থেকে ৫শত টাকা পর্যন্ত খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দাম গতবছরের মতোই রয়েছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি হলে নৌকার দাম বাড়বে বলেও জানান তিনি।
ঝিটকার নৌকা ব্যবসায়ী গফুর জানান, আমরা পাইকাররা ঝিটকা, ঘিওর, বাঠুইমুড়ি। ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, বাইরাখালি ও বেঁরিবাধ থেকে কিনে এনে এখানে নৌকা বিক্রি করি যেজন্য আমাদের লাভ কম। তবে নিজেরা যারা তৈরি করে বিক্রি করে তাদের লাভ কিছুটা বেশি, কেননা নিজেরা তৈরি করলে মজুরিটা তাদের লাভ হয়ে দাঁড়ায় এটাই একটু সুবিধা।
তবে নৌকার দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে স্থানীয় ক্রেতাদের। তেমনি নৌকা কিনতে আসা ঘিওরের বানিয়াজুরি গ্রামের শোভন ও জাহিদুর নামের দুইজন জানায়, নৌকার দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে এইবছর। তাই হাট ঘুরে দেখছি অল্প দামের মধ্যে ভালো একটা নৌকা পাইকিনা।
এদিকে হাটের নৌকা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি দাবি তুলে ধরেন। স্থানীয় গালা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান মিয়া।
তিনি জানান, ঝিটকা হাটের সাথে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ জড়িত, পাশাপাশি আমার স’মিল ও কাঠের ব্যবসা রয়েছে। আসলে ব্যবসায়ীদের বসার জন্য একটা শেঠের প্রয়োজন, সরকারি ভাবেও একটা শেঠ তৈরি করেনাই, বা হাট কমিটি থেকেও আমাদের কোন সুযোগ সুবিধা দেয়নাই। তবে সরকারি টোল কিন্তু আমরা ঠিকই দিচ্ছি। তাই বসার সুন্দর একটা শেঠ থাকলে রোদ বৃষ্টি থেকে ব্যবসায়ী ভাইয়েরা আশ্রয় নিতে পারি এটাই আমাদের একটা দাবী।
ঝিটকা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির মোঃ বেলায়েত হোসেন ভূইয়া জানান, ব্যবসায়ী সমিতি ওই হাটের ডাক দেয়না এবং কোন টাকা পয়সাও নেয়না। হাটের ডাক দেয় সরকার। সুতরাং এর দায় দায়িত্ব সরকারের। তাই এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসন বলতে পারবে তারা কোন শেঠ তৈরি করে দিবে কিনা।
এবিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ বিল্লাল হোসেন জানান, আমরা চেষ্টা করবো তাদের জন্য শেঠ / বসার কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
উল্লেখ্য, বর্ষা মৌসুমের তিন মাস সপ্তাহে একদিন প্রতি শনিবার এই নৌকার হাট বসে এবং তিন মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার নৌকা ক্রয়-বিক্রয় হয়।