সারাবিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা পৌঁছাল ৫০ লাখে। গত বছরের শেষদিকে চীনের উহানে করোনা শনাক্তের ছয় মাসের মাথায় এসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ রোগটি থেকে রেহাই পেল। তবে চলতি মহামারির ধকল অন্যদের সঙ্গে তাদেরও পোহাতে হচ্ছে। ভেঙে পড়া অর্থনীতি ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যাকে প্রতি মুহূর্তে বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্যের অভাবে বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকি।
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের উপাত্ত বলছে, গত রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৯৩ লাখ মানুষের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৫০ লাখ রোগী সুস্থ হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছে পৌনে পাঁচ লাখ মানুষ। বৈশ্বিক গড় মৃত্যুহার ৯ শতাংশ। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ। এর মধ্যে ২ শতাংশ বা ৫৮ হাজার রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন।
সুস্থ হওয়া মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী সেরে উঠেছে গত ৩ জুন। সেদিন বিশ্বের এক লাখ ৫৩ হাজার ৮৯৮ জন সুস্থ হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গড়ে ৮০-৯০ হাজার করে রোগী সেরে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উহানের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনা সংক্রমিত হয়। সম্প্রতি বেইজিংয়ের একটি মাছ-মাংসের বাজারকে করোনার গুচ্ছ সংক্রমণের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই অবস্থা দেখা দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে মাংস প্রক্রিযাজাতকরণ সংস্থায়। অবশ্য এখনো করোনার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
দক্ষিণ কোরিয়ায় গতকাল নতুন করে ৪৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে।
চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়াতেই করোনা মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু ব্যাপকভাবে পরীক্ষা, ট্রেসিং ও চিকিৎসার মাধ্যমে তারা খুব দ্রুতই তা নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পর থেকে দেশটি স্বাভাবিকের দিকে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু গত মাসে দেশটিতে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়। এক দিনেই ৩৫ থেকে সংক্রমণের সংখ্যা ৫০-এ দাঁড়ায়। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক জুং ইয়ন কেওং বলেন, ‘আমাদের ধারণা এখন সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় চলছে। মের ছুটির পর থেকেই এটি শুরু হয়েছে।থ
এদিকে নতুন ৪৬ জন আক্রান্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৮৪ জনে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন বলেছেন, ভাইরাসটি এখনো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ রোগীর সংখ্যা শ্বেতাঙ্গের চার গুণ
যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আছে স্বাস্থ্যবীমা কর্মসূচি। এতে অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে কভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কৃষ্ণাঙ্গের সংখ্যা শ্বেতাঙ্গের তুলনায় চার গুণ। গত সোমবার দেশটির সেন্টার ফর মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিকেইড সার্ভিস (সিএমএস) এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারির মধ্যে প্রকাশিত এ তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ভয়াবহ বৈষম্যের চিত্রই তুলে ধরেছে। সিএমএসের প্রশাসক সীমা ভার্মা বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নিম্ন আয়ের বয়স্ক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে আছে—এ অসমতার বিষয়টিই তথ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
জার্মানির একটি ডিস্ট্রিক্টে ফের লকডাউন
জার্মানিতে টনিজ নামের মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ সংস্থায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গুটেরস্লো ডিস্ট্রিক্টে নতুন করে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। নর্থ-রাইন-ওয়েস্টফারিয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন ল্যাশেট বলেছেন, গুটেরস্লো জেলায় সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষের বাস। একটি কারখানায় দেড় হাজারের বেশি শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় জেলাজুড়ে ৩০ জুন পর্যন্ত এই লকডাউন বলবৎ থাকবে।
জার্মানিতে গত মে মাসে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর এই প্রথম আবার তা আরোপ করা হচ্ছে। দেশটি করোনা মোকাবেলায় প্রশংসা কুড়ালেও সাম্প্রতিক সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ভারতে মৃত্যু ১৪ হাজার ছাড়াল
প্রতিবেশী ভারতে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৪ হাজার ৯৩৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। তাতে করে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৪০ হাজার ২১৫ জনে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে বাড়তে গতকাল ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার থাবায় ভারতে ৩১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মোট প্রাণহানি হলো ১৪ হাজার ১১ জনের। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু ছয় হাজার টপকেছে। সেখানে মোট ছয় হাজার ২৮৩ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী দিল্লিতে ধারাবাহিকভাবে মৃত্যু বেড়েছে। করোনার প্রভাবে সেখানে মোট দুই হাজার ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাটে মারা গেছে এক হাজার ৬৮৫ জন।
সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আনন্দবাজার।