ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সংক্রমণ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখনও বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিশ্বের জনবহুল তিনটি দেশ- ভারত, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে শঙ্কা আরও বেড়েছে।
দুই মাসের বেশি সময় কঠোর লকডাউনে থাকলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ ভারতে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে গতকাল প্রায় ১৬ হাজার মানুষ শনাক্ত হয়েছে। এতে মোট আক্রান্ত চার লাখ ৬১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশটিতে প্রাণহানি ইতোমধ্যে সাড়ে ১৪ হাজার পার হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে বিশ্বে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতির আবারও অবনতি হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমার পর প্রাণহানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। দেশটির অনেক রাজ্যেই আবার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। যুক্তরাষ্ট্রে কড়াকড়ি শিথিলের পর থেকেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। তবে মৃত্যুহার কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে দৈনিক মারা যাচ্ছে এক হাজারের কম মানুষ। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশটিতে দৈনিক দুই হাজারের বেশি রোগী মারা গেছে বেশ কয়েকদিন। প্রায় ৩৩ কোটি জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২৪ লাখ ২৫ হাজার মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৫২০ জনের।
করোনায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ব্রাজিলে প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে ৩০-৪০ হাজার রোগী। মারা যাচ্ছে সহস্রাধিক মানুষ। তবে দেশটিতে পরীক্ষার হার কম হওয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অনেক বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। ২১ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ১১ লাখ এবং মারা গেছে প্রায় ৫৩ হাজার। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলের অবস্থান। এ ছাড়া জনবহুল অন্য কয়েকটি দেশেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, রাশিয়া ও মেক্সিকো।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সার্বক্ষণিক হিসাব রাখা ওয়ার্ল্ডওমিটারের হিসাবে গতকাল বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্বে প্রাণঘাতী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৯৪ লাখের বেশি মানুষ। মারা গেছে চার লাখ ৮০ হাজার ৭০৪ জন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছে। গতকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৫০ লাখ ৮৪ হাজার কভিড-১৯ রোগী।
কড়াকড়ি শিথিলের পর যুক্তরাজ্যকে দ্বিতীয় ধাক্কার জন্য সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইংল্যান্ডে লকডাউন শিথিল করার পরপরই এই চিঠি প্রকাশ হয়।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম সোলিহ ঘোষণা দিয়েছেন ১৫ জুলাই থেকে দেশটিতে চালু হবে পর্যটন। আন্তর্জাতিক পর্যটকরাও আসতে পারবেন। বিদেশিদের জন্য কোনো ভাইরাস টেস্টের প্রয়োজন নেই। মালদ্বীপের আয়ের একটা বড় উৎস এই পর্যটন। মালদ্বীপের জনসংখ্যা তিন লাখ ৩০ হাজারের মতো যার মধ্যে দুই হাজার ২০০ রোগী পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে মানুষের দেহে কভিড-১৯ টিকা পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি। এই মহামারি সামলাতে এটাই প্রথম ও সবচেয়ে উন্নত টিকা।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে কয়েকদিন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তবে সেখানে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, বেইজিংয়ে করোনার সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে। গত ১১ জুন থেকে বেইজিংয়ে ২৪৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর নগরীর সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা করা হয়।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।