রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
মার্কিন দূতাবাস থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান তারেক রহমানের ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খালাস পেলেন সাংবাদিক নেতা গোলাম ফারুক মজনু বিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাস আলীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন আশুলিয়ায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও মিজান শাহ্ দরবারে ৫৩ তম মাহফিল অনুষ্ঠিত। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না: তারেক রহমান আবহাওয়ার বৈরীতায় উত্তাল সাগর, ঝড়ের আশঙ্কা জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

শিগগিরই ২ হাজার ডাক্তার ও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক / ১৮৪ শেয়ার
প্রকাশিত : সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০

একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আজ সোমবার বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনও ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও হবো না। যতই বাধা আসুক বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

করোনাভাইরাসকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করে এবং আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম এই বাজেটের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবো।’

 

আজ সোমবার (২৯ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশণ শুরু হয়।

 

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে যে সংকটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে।

দেশের কোনও মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না।’ আওয়ামী লীগ কখনও হতাশায় ভোগে না উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব সময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাই।

 

তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনও কখনও সে পরিকল্পনা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনঃনির্ধারণ করতে হয়। সেই কারণে আমরা বাজেট ঠিক রেখেছি। প্রণয়নও করেছি। প্রতি বছর ২০ লাখ তরুণ শ্রম বাজারে যুক্ত হচ্ছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের চ্যালেঞ্জ। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আশা করি এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।’

 

শিগগিরই ২ হাজার ডাক্তার ও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ:

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে অল্প সময়ের মধ্যে ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও দুই হাজার চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

আমরা ৪ হাজার নার্স নিয়োগ দেব। সেই নির্দেশ আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ইতিমধ্যে দিয়েছি। শিগগিরই এই নিয়োগ দেয়া হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে ৩ হাজার টেকনিশিয়ানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

 

বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে:

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতি একটি ক্রান্তিলগ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী আজ এই সংকট। মহামারী কোভিড-১৯ মহাদুর্যোগের কারণে আজকে বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে প্রাক্কলন দিয়েছে।

করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লাখ কর্মীর চাকরি হ্রাস, বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫ থেকে ১৫ শতাংশ হ্রাস এবং বৈশ্বিক রেমিট্যান্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে। ঠিক এ পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশে একটি বাজেট প্রণয়ন করেছি। এই বাজেট প্রণয়ন অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ কাজ ছিল। এই বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদ জানাই।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সব বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে ৫ দশশিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। আশা করি, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২১ অথর্বছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।’

 

প্রবৃদ্ধির হার এই ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে অক্টোবর/নভেম্বরে করোনার টিকা আবিষ্কার, দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া, কর্মসৃজন ও ব্যক্তি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ও প্রণোদনার প্যাকেজের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মহামারি পূর্বাবস্থায় চলে আসা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাস আয়ে বর্তমান সংকট কেটে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান সরকার প্রধান।

প্রণোদনা প্যাকেজে ১ কোটি ৬০ লাখ কর্ম সুরক্ষা ও সৃজন:

বাজেট বর্ক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বঘোষিত এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী যেন উপকৃত হয় সে লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পিতভাবে এবং যথাযথ সময়ের আগেই প্রতিটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছে। ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়াও, প্রায় এক কোটি ৬০ লক্ষ কর্ম সুরক্ষা ও নতুন কর্ম সৃজন হবে।’

 

করোনায় সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা:

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই যাতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি না হয় সে জন্য এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। প্রত্যেকটি জমি যাতে আবাদ হয় তার জন্য আমরা বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি, নির্দেশনা দিচ্ছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে রকানও জমিও খালি রাখা না হয়।

কারণ বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ হতে পারে। এসময় বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয় সেই উদ্যোগ আমরা হাতে নিয়েছি। কাজেই দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো, যার সেখানে জমি আছে যে যা-ই পারেন উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ান। নিজের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত করুন।

সরকার যা যা করার করে যাচ্ছে এবং করবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণ, খাদ্যশস্য সংরক্ষণের স্থান বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নের ব্যবস্থার কথা জানান। আগামী অর্থবছরে রাসায়নিক সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হবে ও কৃষি প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

বোরো মৌসুমে ধান কাটতে কৃষকদের সহায়তা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বোরো মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান কাটার লক্ষ্যে হারভেস্টার মেশিন ক্রয়ে আমরা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করেছি। ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছিলাম তারা যেন তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে কৃষকদের ধান কাটায় সহায়তা করে।

ছাত্রলীগের কর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমের আগেই ধান কেটে ঘরে তুলতে সহায়তা করেছে। একইসঙ্গে যুবলীগ, কৃষকলীগ ও যুব-মহিলা লীগের কর্মীরাও স্ব-স্ব এলাকায় কৃষকদের ধান কাটায় সহায়তা করেছে। ফলে আম্পানে ধানে তেমন একটা ক্ষতি করতে পারেনি।’ তিনি জানান, ‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১ আষাঢ় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

আমি আওয়ামী লীগের ৫৫ লাখ কর্মীর প্রত্যেককে একটি ফলজ, একটি ঔষধি এবং একটি বনজ বৃক্ষ অর্থাৎ তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছি। এর ফলে দেশে বৃক্ষ আচ্ছাদনের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা সীমিত হয়ে আসায় খাদ্যশস্যসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সংকটের শুরু থেকেই আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ ছিলাম।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আমরা খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আগামী অর্থবছরেও খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছি।

চলতি বোরো মৌসুমে আমরা ১১ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আট লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছি যা গত বোরো মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ। আমাদের খাদ্য চাহিদা তিন কোটি ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের উৎপাদনও অব্যাহত থাকবে। কাজেই আমাদের অসুবিধা হবে না।’

 

করোনায় দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা:

 

করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে মানবিক সহায়তা হিসেবে আমরা বিস্তৃত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি যার আওতায় এ পর্যন্ত আমরা সারাদেশে দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। সারাদেশে এক কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মাঝে এক লাখ ৮৪ হাজার ১২২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি প্রায় ১২৩ কোটি টাকা; এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৯৫ লাখ ৭৯ হাজার। শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছি ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং এতে সাত লাখ ৭৭ হাজার ৫২৫টি পরিবার উপকৃত হয়েছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময়ে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকায় এবং দ্রুত ত্রাণ তৎপরতা শুরু করতে পারায় আমরা তা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি।’

 

উন্নয়ন:

 

এবারের বাজেটে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের গুনগত মান উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আগামী অর্থবছরের মধ্যে দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে আসবে বলে তিনি জানান। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও চাহিদা মেটাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কগুলোকে পর্যায়ক্রমে চার লেনে উন্নীতকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন, দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এ সব নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে তা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য ব্যাপক সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে।’

 

দুর্নীতি করলে কাউছে ছাড় নয়:

 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুর্নব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে, এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং আমাদের অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকার দুর্নীতিবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখবে।’

 

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বেগবান করার জন্যে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা ও ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে উৎকৃষ্ট অবস্থান অর্জন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছি।’

 

ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি মুজিববর্ষের উপহার:

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাগণের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং করহার কিছুটা হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়াও করপোরেট ট্যাক্সের হার দুই দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ আসবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।

 

বাজেট সহায়তা উন্নয়ন সহযোগীদের ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা প্রদান:

 

করোনাভাইরাস জনিত অর্থনৈতিক অভিঘাত হতে উত্তরণে সরকারের ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজকে অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী উল্লেখ করে উন্নয়ন সহযোগীরা তা বাস্তবায়নে দ্রুত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীরা ইতোমধ্যে পাঁচ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারি খাতে জমা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর তার মধ্যেই আমরা প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর মত বৈশ্বিক মহামারীর মোকাবিলা করছি। আম্পানের মত ঘূর্ণিঝড় মোবাকিলা করেছি। হয়তো আগামীতে বন্যা আসবে, সেটাও মেকাবিলা করবো। সেই প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।’

 

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি:

 

তিনি জানান, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় নিম্ন আয় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কাযর্ক্রমের আওতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা ভাতা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ পাঁচ হাজার জনে বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ‘পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম’ শুরু করেন যা বর্তমানে দেশের সব জেলায় প্রত্যেক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তিনি জানান, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করা এবং গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মোট উপকারভোগীর সংখ্যা হলো ১২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার জন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

 

বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো:

যতই ঝড়ঝঞ্জা, দুর্যোগ হোক না কেন! মনের সাহস রেখে সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা অর্জন করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে আমরা সফলভাবে এ মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুনরায় শামিল হবো।

কারণ, বৈশ্বিক মানদণ্ডে আমাদের রয়েছে শক্তিশালী আর্থ-সামাজিক অবস্থান। গত ২ মে, ২০২০ দ্যা ইকনোমিস্ট একটি গবেষণা প্রতিবেদনে চারটি মানদণ্ডে সবল অর্থনীতির ৬৬টি দেশের যে তালিকা করেছে; সেখানে বাংলাদেশ শক্তিশালী নবম অবস্থানে রয়েছে।

করোনাভাইরাসকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করে এবং আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম এই বাজেটের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবো।

 

 

Facebook Comments Box


এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
Developed by: Agragamihost.Com