লাদাখের সংঘর্ষের পর এবার কাশ্মীরে রণসাজ শুরু করেছে ভারত। ইন্ডিয়া টাইমস জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় এলপিজি গ্যাস পরিবেশকদের আগামী দুথমাসের জন্য রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার মজুদ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক ঘাঁটি গড়তে ১৬টি স্কুল খালি করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
প্রশাসন বলছে, ভূমিধসের কারণে এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। এজন্যই গ্যাস মজুদ করতে বলা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, সরকার যে কারণই দেখাক না কেন, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, কাশ্মীরে বড় কিছুই ঘটতে চলেছে। এদিকে, লাদাখ সংকট নিয়ে কমান্ডার পর্যায়ের তৃতীয় দফায় আজ (মঙ্গলবার) বৈঠকে বসছে ভারত ও চীন।
কাশ্মীরের সঙ্গে কারগিলের সংযোগ জেলা গান্ডারওয়াল পুলিশ সুপারের দফতর থেকে জারি করা নির্দেশিকায় ওই এলাকার ১৬টি স্কুল খালি করে দিতে বলা হয়েছে। সেগুলো এখন থেকে নিরাপত্তা রক্ষীদের জন্য ব্যবহার করা হবে।
কাশ্মীরের ডিরেক্টর অব দ্য ফুড, সিভিল সাপ্লাই অ্যান্ড কনজিউমার বিভাগের নির্দেশনায় গ্যাসের সিলিন্ডার মজুদ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের উপদেষ্টা ফারুক খান বলেন, আগামী শীতকে সামনে রেখে গ্যাস মজুদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত বছর কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তলের আগেও এমনই নির্দেশনা জারি করেছিল প্রশাসন। এছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে জঈশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে হামলার আগেও এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
ওই সময় হাসপাতালগুলোকে ওষুধ মজুদ রাখা ও ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছিল। এখন নতুন করে গ্যাস মজুদ ও স্কুল খালির করার নির্দেশনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে কাশ্মীরবাসীর মনে।
সরকার অবশ্য জানিয়েছে, দুইটি বিষয় নিয়েই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের ওপর বার বার ধস নামার
কারণেই এলপিজি স্টক করার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে অন্য কোনও বিষয় জড়িয়ে নেই। সেনাবাহিনীর জন্য স্কুল বাড়ি দেয়ার প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য, অমরনাথ যাত্রার জন্য এ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।
করোনার কারণে এ বছর প্রায় সব ধর্মীয় উদযাপনই বন্ধ রেখেছে সরকার। অমরনাথ যাত্রা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু যাত্রা যে খুব বড় আকারে হবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও এ বছর করতে হবে না। ফলে এত সংখ্যক সেনা জওয়ান কেন সেখানে নিয়ে যেতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রক্ষার ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে দুই পক্ষেরই।
গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাবর্ষণে ভারত-পাকিস্তান দুথদেশেরই নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে এ দ্বন্দ্বের মধ্যেই কয়েক সপ্তাহ ধরে চীনের সঙ্গেও চরম বিরোধ চলছে ভারতের।
লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় দুথপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারান ২০ ভারতীয় সেনা, আহত হন অন্তত ৭৬ জন। চীনাবাহিনীর কতজন হতাহত হয়েছেন তা নিশ্চিত করেনি দেশটি। এরপর থেকে দুই পক্ষই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে সীমান্তে।
গত ৬ জুন প্রথম দফার বৈঠকে বসেন ভারত ও চীনের সেনা কমান্ডাররা। সেখানে অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তি থাকায় গলওয়ানে লাঠালাঠি ও পাথর ছোড়াছুড়ি হয়েছে। সংঘর্ষের পরেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) লঙ্ঘন থেকে বিরত হয়নি চীন।
২২ জুন কোর কমান্ডার স্তরের দ্বিতীয় বৈঠকে সেনা সংখ্যা কমানো এবং ‘মুখোমুখিথ অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হলেও তা উপেক্ষা করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। এই পরিস্থিতিতে লাদাখের অবস্থা পর্যালোচনার জন্য বৈঠক করেছে কেন্দ্রের ‘চায়না স্টাডি গ্রুপথ (সিএসজি)।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নেতৃত্বাধীন এ গোষ্ঠীতে রয়েছেন সেনাপ্রধান, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) প্রধান। ভারতের অংশে চুশুলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
লাদাখ সংঘর্ষস্থলের অদূরে গলওয়ান নদীর তীরে চীনা ছাউনির সংখ্যা গত এক সপ্তাহে আরও বেড়েছে বলে বিভিন্ন উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে।
গোগরার হট স্ক্রিং এলাকা এবং প্যাংগং লেকের উত্তরে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ থেকে ৪ পর্যন্ত কংক্রিটের বাঙ্কার গড়েছে চীন সেনা। অভিযোগ, দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটির দক্ষিণে দেপসাং উপত্যকায় এলএসি পেরিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার ঢুকে লাল ফৌজ ‘ওয়াই-জংশনেথ ডেরা বেঁধেছে।