হামার খবর কেউ রাখেনা,উপরওয়ালা হামাক কোন পাপের শাস্তি যে দেছে। জীবনের উপর বিতৃষ্ণা আসি গেইছে, এতো কষ্ট আর সয্য করবা পারিনা। একে তো মুই নিজে অসুস্থ্য কিছুদিন ধরি বোনের একটা হাত ভাঙ্গি গেইছে সেও অসুস্থ্য হয়া চোখের সামনে কোকাছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাবা পারোছিনা। থাকার ঘরটা ভাঙ্গি গেইসে,পেটের ভাতেই জোটেনা ঘর ঠিক করমো কেঙ্কা করি ?
বাবু মেম্বার দয়া করি মোর বড় ভাই দুলাল রায়ের নামে একটা ভাতা কার্ড করি দিছে,তাছাড়া আর কোনো সুযোগ সুবিধা হারা পাইনা,বাড়ীত ৩জন প্রতিবন্ধি অথচ সেগুলা কোনোরকম সুবিধা হারা পাইনা। প্রধান মন্ত্রী বলে হামার মতো গরীব মানুষোক বাড়ী বানে দেছে,হামাক যদি একটা ঘর দিলো হয়,তাহলে হারা শান্তিতে ঘুমানো হয়। কান্না বিজরীত কন্ঠে এসব কথা বলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পূর্ব কাটাবাড়ী গ্রামের কানাই রায়।
আর্থিক দৈন্যতা আর সামাজিক অবমুল্যায়ন তাই চরম কষ্টে জীবন যাপন। এক সময় যাদের ৩০ থেকে ৪০ বিঘা আবাদী জমি ছিলো,গোলাভর্তি ধান আর পুকুর ভরা মাছ ছিলো সুখের জীবন ছিলো,তাদের জমি দেখাশুনার জন্য ২ থেকে ৩জন কাজের মানুষ ছিলো। বর্তমানে তাদের একটু শান্তিতে মাথা গোঁজার ঠাই নেই। যেটুকু আছে সেটা না থাকার মতোই। ৮ শতাংশ জমির উপর টিন সেটের ছাপরার দুটো ভাঙ্গাঘর এর মধ্যে একটি পুরো পুরি ভেঙ্গে গেছে,বর্তমানে একটি মাত্র ঘর রয়েছে সেখানেই কোনো রকমে বসবাস করেন তারা। সেটিও যেকোনো সময় ঝড় বাতাসে ভেঙ্গে পড়তে পারে। সেখানে একপাশে গরু থাকে আর অন্য পশে একই সাথে থাকেন ৪ ভাই ও এক বোন। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে তবু বিয়ে করতে পারেনি তাদের এক বোন ও চার ভাই। এমনি এক অসহায় পরিবারের খোঁজ মিলেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকার পুর্ব কাঁটাবাড়ী গ্রামে। জানা গেছে,উপজেলার বড়বন্দর এলাকার বৃটিশ শাস্বন আমলের পোষ্ট মাষ্টার মৃত মহিনি মহন রায় এর ছেলে মৃত ফনি মহন রায় মৃত্যু কালে তার স্ত্রী মৃত উষা রানীসহ ৩কন্যা ও ৬ ছেলে রেখে যান তাদের পৈতৃক বাড়ী বড়বন্দর এলাকায়। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস ফনি মহন রায় এর মৃত্যুর পর কিছু সার্থেনেস্বি মানুষ সড়যন্ত্র করে তাদের জমিজমা সব জবরদখল করে নেয়। এর পর থেকে শুরু হয় তাদেও কষ্টের জীবন। ফনি মহন রায়ের ছেলে কানাই সাহা বলেন,তাদের বাবার মৃত্যুর পর জমিজমা বেদখল হয়ে যায় এরপর তার বাবার মৃত্যুর কারনে দুশ্চিন্তায় শোকে কিছুদিন পর তাদের মা উষা রানী মারা যান। এরপর শুরু হয় তাদের জীবনের করুন পরিনতি। কানাই রায় ও তার বড় ভাই দুলাল রায়,মধাব রায়,গোপাল রায় এবং তাদের বোন,শেফালী রানীসহ তারা বর্তমানে পুর্ব কাটাবাড়ী বাড়ী গ্রামে বসবাস করেন। কিছুদিন পুর্বে বর্ষায় ঝড়ের তোপে টিনের একটি ঘর ভেঙ্গে পড়ে চাপা পড়ে তাদের বোন জোসনা রানী মারা যান। তাদের আরও এক বোন অনিমা রায়কে তাদের বাবা বেঁচে থাকতে বিয়ে দিয়েছেন সে শসুর বাড়ীতে থাকে আর এক ভাই বালাই রায় বিয়ে করে অন্যত্র থাকে। ছোটো ভাই শ্যামল রায় সেও মারা গেছেন। বর্তমান তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই করুণ যে,আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় ভাঙ্গা ঘরটিও মেরামত করতে পারছেনা।
বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে তবু বিয়ে করতে পারেনি তাদের এক বোন ও চার ভাই। যেখানে দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোগাড় করাই কষ্টসাধ্য বিয়ে করবে কিভাবে। কোনো কোনো দিন কোনো কোনো বেলা তাদের না খেয়ে দিন কাটে,পেটপুরে খেতেও পায়না। তাদের অবস্থা এতই খারাপ যে,পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের প্রায়ই উপোস থাকতে হয়।
কানাই সাহা বলেন,তিনি আগে কাঁচামালের ব্যাবসা করতেন,শারিরিক অসুস্থতার কারনে কয়েক বছর হলো ব্যাবসা ছেড়ে দিতে হয়েছে,আগের মতো এখন আর তাদের পরিবারের কোনো আয়-রোজগার নেই। স্থানীয়রা বলেন,তাদের ভাই বোনদের মধ্যে এক বোন ও দুই ভাই বুদ্ধি প্রতিবিন্ধি হওয়ায় তারাও কোনো কাজ করতে পারেনা। যে কারণে অনেক সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে তাদের জীবন কাটে।অভাবের সংসার ঠিকমতো খেতে না পাওয়ায়,সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় বয়সের ভার ও অসুস্থতার কারনে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। গ্রামবাসীরা বলেন,কাচাবাজারে ব্যবসায়ীরা সবজি বাছাাইয়ের পর যে নষ্ট সবজি গুলো ফেলে দেয়। অভাবের কারনে ওই ফেলে দেয়া নষ্ট সবজি গুলো বাজার থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসে ওর মধ্যে থেকে বেছে বেছে কিছু সবজি রান্না করে এবং বাকিগুলো গরুকে খাওয়ায়।
তাদের বড়ভাই দুলাল রায় বলেন, কতোদিন যে এক টুকরা মাংস দাতে কাটিনি। কোনো কোনো সময় লজ্জা ভুলে সাহায্যের জন্য অন্যের কাছে হাত পাতেন তিনি। এভাবেই চলে তাদের জীবন। কানাই রায় ও তার ভাই বোনেরা প্রশাসন ও সমাজের বিত্তানদের কাছে সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ইতি পুর্বে ঘর বরাদ্ধের তালিকা করা হয়েছে যার