, , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , ,

শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। বড় মূলধনের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন তলানিতে। গত দুদিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক কমেছে ২৭১ পয়েন্ট। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূলধন ২১ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। বাজারের এই অবস্থান চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দরপতন অস্বাভাবিক। হঠাৎ করে কারা এভাবে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলেছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। অস্বাভাবিকভাবে শেয়ার বিক্রির জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন মাস বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ে লেনদেন ও মূল্যসূচক সবকিছুই বেড়েছিল। লেনদেন আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসির দুটি সার্কুলারকে কেন্দ্র করে বাজারে ছন্দপতন শুরু হয়। এর একটি সার্কুলার ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, তার কারণ খতিয়ে দেখা। এ ব্যাপারে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে তদন্তের গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বিপক্ষে অবস্থান নেয় শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। এতে বাজারে পতন শুরু হয়। পরে সার্কুলার স্থগিত করে বিএসইসি। এরপর মার্জিন ঋণকেন্দ্রিক আরেকটি সার্কুলার দেয় বিএসইসি। ওই সার্কুলারে ছিল, মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হবে ১২ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজ গ্রাহকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি সুদ নিতে পারবে না।

ফেব্রুয়ারি থেকেই সেটি কার্যকর হবে। এরপর আবার পতন শুরু হয়। পরে ব্রোকারদের চাপে সেই সার্কুলারের সময় পিছিয়ে ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাতেও পতন থেমে থাকেনি। তবে গত ২ দিনের পতন ছিল যে কোনো বিবেচনায় অস্বাভাবিক।

গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর মূল্যসূচক ছিল ৫ হাজার ৬৪৭ পয়েন্ট। দুই কার্যদিবসে তা কমে সোমবার ৫ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। অর্থাৎ দুই দিনে মূল্যসূচক ২৭১ পয়েন্ট কমেছে। দুদিনে ডিএসইর বাজারমূলধন ৪ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ৪ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ বাজারমূলধন ২১ হাজার কোটি টাকা কমেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বড় ৬টি হাউজ থেকে বেশি শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে শক্তিশালী একটি গ্রুপের শেয়ার বিক্রিকে কেন্দ্র করে দুই বড় হাউজের প্রধান নির্বাহীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ব্রোকারদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, কোম্পানির শেয়ারের দাম ওঠানামার বিষয়টি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। এখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো হাত নেই। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারের এটাই নিয়ম। তবে কেউ যদি আইন লংঘন করে অস্বাভাবিক লেনদেন করে, বিএসইসি তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে।

এদিকে একক দিন হিসাবে সোমবার ডিএসইতে ৩৫০টি কোম্পানির ২১ কোটি ১৫ লাখ লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৭৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ২৩৬টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ৯১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ১২৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৬৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৩ পয়েন্ট নেমে এসেছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৪ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

শীর্ষ দশ কোম্পানি : এদিন ডিএসইতে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো- বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ-আমেরিকান ট্যোবাকো, রবি অজিয়াটা, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মা, সামিট পাওয়ার, মীর আখতার, এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন এবং আইএফআইসি ব্যাংক।

ডিএসইতে সোমবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো-আনলিমা ইয়ার্ন, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, পিএইচপি মিউচুয়াল ফান্ড-১, ঢাকা ব্যাংক, মীর আখতার, আইসিবি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির দ্বিতীয় মিউচুয়াল ফান্ড, স্কয়ার টেক্সটাইল, মেট্রো স্পিনিং, স্কয়ার ফার্মা এবং ট্রাস্ট ব্যাংক।

অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা পেট, শ্যামপুর সুগার, শাইনপুকুর সিরামিকস, বেক্সিমকো ফার্মা, মাইডাস ফাইন্যান্স, বিডি থাই, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, সন্ধানী ইন্স্যুরেন্স এবং বেক্সিমকো লিমিটেড।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225