মোঃ নজরুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি:
করোনার কারণে এবার হচ্ছে না যশোরের পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় মৃাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান।
প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে সীমান্ত গেট এ অনুষ্ঠানের জন্য খোলা হলেও এবার সেটি আর হচ্ছে না।
জানা যায়, ২০০২ সাল থেকে বেনাপোল চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে ২১ ফেব্রুয়ারি গেট খুলে দেয়ার প্রথা চালু হয়। পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বাংলাদেশের যশোর-১ আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের উদ্যোগে গঙ্গা-পদ্মা মৈত্রী সমিতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে।
প্রথমদিক থেকে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়ে আসলেও ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এমপি-মেয়র দ্বন্দ্বের কারণে এমপিকে বাদ দিয়ে মেয়র একাই অনুষ্ঠান করে আসছিলেন। ২০১৯ ও ২০২০ সালে মেয়রকে বাদ রেখে এ অনুষ্ঠান করছেন এমপির অনুসারীরা
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রতিবারই যশোরের বেনাপোল নোম্যান্সল্যান্ডে বসে দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলা। বুকে কালো ব্যাজ, মুখে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…।’
নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, ফুলে-ফুলে সয়লাব নোম্যান্সল্যান্ড। তখন দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ওই স্থানে আবেগাপ্লুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গণ করে সকল ভেদাভেদ ভুলে যান কিছু সময়ের জন্য। ফুলের মালা দিয়ে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ বাঙালীর নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করে দলে দলে যোগ দেন একুশের মিলন মেলায়। ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে।
এ সময় পেট্রাপোল ও বেনাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখায় ছেদ পড়ে।
২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বেনাপোল নোমান্সল্যান্ড এলাকা সাজে নানা রংয়ের বর্ণিল সাজে। নোমান্স ল্যান্ড এলাকায় নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। সকাল থেকে দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন শহীদ বেদীতে। আবেগ আর ভালোবাসায় ভাষা প্রেমীরা ভূলে যায় তাদের সীমান্ত রেখা।
কিন্তু এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে বেনাপোলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এই দৃশ্য আর দেখা যাবে না। এতোদিন দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধি ও মন্ত্রীরা প্রতিবেশী দেশে গিয়ে শহীদবেদিতে পুস্পস্তবক দিতেন।
এবার যৌথ ভাবে একুশের কোন অনুষ্ঠান নোম্যান্স ল্যান্ডে হবে না করোনার কারণে। তবে ওপারে ছোট করে একটা অনুষ্ঠান হবে সেখানে স্থানীয় সাংসদসহ বাংলাদেশের ১০০ জনকে তারা আমন্ত্রণ করেছেন। উভয় দেশেের প্রশাসনও রাজি নয় করোনার মধ্যে এ অনুষ্ঠান করতে।
এ ব্যাপারে দুই বাংলার একুশ উদযাপন কমিটির বেনাপোলের আহবায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘করোনার কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে উভয় দেশের আয়োজকরা আলোচনা করে এবার বেনাপোলের নোম্যান্সল্যান্ডে একুশের মিলন মেলা হচ্ছে না
তবে পেট্রাপোলে ছোট একটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজনকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে আগামী বছর থেকে পুনরায় অনুষ্ঠান করা হবে।’
মো