বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন

বাজেট আসছে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার

অনলাইন ডেস্ক / ৬২৪ শেয়ার
প্রকাশিত : সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

ঢাকা অফিসঃ

করোনার প্রভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেই বাজেটের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আশার আলো হচ্ছে রাজস্ব আহরণে। করোনার পর চাঙ্গা হয়ে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি-এমন ধারণা নিয়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন বাজেটের (প্রস্তাবিত) আয়-ব্যয়ের হিসাবে ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
করোনার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধিও কাটছাঁট করা হয়েছে। শুরুতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরা হলেও সম্প্রতি তা কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশের ঘরে আনা হয়। তবে চলতি বছরের ন্যায় এবারও মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন ভালো হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে কম থাকবে। করোনার কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এর সুফল দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এসে পড়বে। যদিও বর্তমানে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে আছে।
আসন্ন বাজেটে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় অগ্রাধিকার খাতগুলোয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করাই হবে প্রধান অগ্রাধিকার। এজন্য স্বাস্থ্য, কৃষি, সমাজকল্যাণ, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আগামী বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থাকছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকারও বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। আর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। এজন্য এসএমই খাতে আরও অর্থায়ন করা হবে। এ ছাড়া আগামী বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে জিডিপির আকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরে এগোচ্ছে। এটি টাকার অঙ্কে ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ জিডিপির ১৭ শতাংশের উপর ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় নতুন বাজেটে। করোনার কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পুরোপুরি হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন খাত, পরিবহণ ও হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় এখনো মন্দা চলছে। যে কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি খুব বেশি হবে না-এমন হিসাব থেকে আগামী বাজেটে এ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়। চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়। পরে সেটি সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক সূচকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে প্রতি ৩ মাস অন্তর অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের অগ্রগতি নিয়ে রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে জুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব, পরিকল্পনা সচিবসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে তুলে ধরা হয় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি। পাশাপাশি একই বৈঠকে রূপরেখা ঠিক করা হয় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের। আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রস্তাবিত আকার বছরে রাজস্ব খাতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজস্ব খাতে মোট আদায়ের হার জিডিপির প্রায় ১১ দশমিক ২ শতাংশ ধরে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন বছরে রাজস্ব আয় আরও কীভাবে বাড়ানো যায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কারণ এ বছর আমদানি ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় এ খাতে কাস্টমস রাজস্ব অনেক কমে গেছে। আগামীতে উভয় খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নাধীন। এসব খাতে বড় ধরনের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে প্রতি বছর। সে ধারাবাহিকতায় আগামীতে বড় ধরনের বরাদ্দ থাকবে। তবে সরকারের দ্বিতীয় বছরে এডিপিতে বড় ধরনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে না। ফলে উন্নয়ন খাতে সরকারি বিনিয়োগ অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন বছরে বরাদ্দের আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি চলতি এডিপির তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি বছরে এডিপিতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে এখনও পর্যন্ত অনেকটা শ্লথগতি বিরাজ করছে। করোনার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটেছে।
অর্থ বিভাগের হিসাবে এবারও ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশের উপরে থাকছে। বাজেট ঘাটতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ রেখে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

Facebook Comments Box


এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
Developed by: Agragamihost.Com