,

বর্তমান পরিস্থিতিতে ধূমপান ও মাদক ছাড়তে হবে

করোনা মহামারির সঙ্গে ধূমপান ও মাদকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশের কারণে আমাদের যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। সরকার ইতোমধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।

একথা অনস্বীকার্য, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে মাদকের পাচার ও সরবরাহ অনেকটাই কমেছে। তবে বর্তমান করোনা মহামারির কারণে নজরদারির কিছুটা শিথিলতার সুযোগ নিচ্ছে কারবারিরা। বিভিন্ন কৌশলে দেশে মাদকের চালান আনছে তারা। বিভিন্ন যানবাহন যেমন অ্যাম্বুলেন্স, নিত্যপণ্য পরিবহণের গাড়িতে করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন নিয়ে আসছে কারবারিরা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান অব্যাহত রেখেছে। কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো পার্সেলে, এমনকি ত্রাণ বিতরণ ও ওষুধ বিক্রিসহ বিভিন্ন কৌশলে মাদক বিক্রি করছে তারা।

দেশকে মাদকমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি, বিশেষ করে ছাত্রসমাজকে টার্গেট করে মাদকবিরোধী প্রচারের কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা মাদকাসক্তির বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-১. সমবয়সিদের চাপ, ২. হাতের কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া অর্থাৎ মাদকের সহজলভ্যতা, ৩. বেকারত্ব ও কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থতা, ৪. আর্থসামাজিক অস্থিরতা, ৫. মাদকের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা, ৬. সমাজে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ৭. পারিবারিক কলহ, ৮. চিকিৎসা সৃষ্ট মাদকাসক্তি, ৯. কৌতূহল, ১০. ধূমপান ইত্যাদি।

একটি কথা না বললেই নয়, মাদকের নাটের গুরু হচ্ছে সিগারেট। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাদকাসক্তি ও ধূমপানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি মারাত্মক বলে উল্লেখ করেছে। তামাকের ধোঁয়ায় ৭ হাজার রাসায়নিক পদার্থ আছে, যার মধ্যে ৭০টি ক্যানসার সৃষ্টি করে এবং এর একটি উপাদান মাদকের আওতায় পড়ে, সেটি হচ্ছে নিকোটিন। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী। অর্থাৎ ধূমপান দিয়ে তারা তাদের নেশা শুরু করে। পরবর্তীকালে তারা গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও কোকেনে আসক্ত হয়।

ধূমপান করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ধূমপায়ী বা তামাক ও মাদকসেবীরা নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যাসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে বিধায় তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এবং প্রাণহানির ঝুঁকির শীর্ষে অবস্থান করছে। সুতরাং, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ধূমপায়ী ও মাদকাসক্তদের নেশা ত্যাগ করার জন্য চিকিৎসার মাধ্যমে (কাউন্সেলিং/রিহ্যাব) সুস্থ করে তোলা এখন সময়ের দাবি।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225