, , ,

নার্সিং অধিদপ্তরের অনিয়মের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে বিপাকে নার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নার্সদের প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাট্যাস দিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. খাদেমুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেছেন- অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে নানা ভাবে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বদলির আদেশ দিয়েছে। একই সাথে ১০ দিনের মধ্যে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খৈফিয়ত তলব করেছেন। খাদেমুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) মোহাম্মদ আব্দুল হাই স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রশিক্ষণ ইচ্ছুকদের আবেদন করতে বলা হয়।

ওই বিজ্ঞপ্তি বলা হয়- আবেদনকারীকে এমএসএন/এমপিএইচ ডিগ্রি পাস বা সমসানের পাস হতে হবে (সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাসকৃতদের অগ্রাধীকার)। কিন্তু প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মানা হয়নি। এছাড়া ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ২৩ মার্চও একই ব্যক্তিরা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পরে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) মোহাম্মদ আব্দুল হাই এর নির্দেশে তিনি স্ট্যাটাস রিমুভ করেন। সেই স্ট্যাটাসে খাদেমুল লিখেছিলেন, ডিজি অফিসে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গেছে। এখানে তদবির সুপারিশ ছাড়া, সাধারণ ভাবে আপনি কিছু পাবেন না; শুধু বদলি ছাড়া।

স্ট্যাটাসে তিনি আরো লেখেন, কোথাও স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা নেই। সব জায়গায় পরিচিতি, স্বাজন প্রীতি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিডের ডিউটি করছি। ঢাকা মেডিকেল নয় আমি মনে করি সারাদেশে নার্সদের মধ্য থেকে আমি সর্বোচ্চ কোভিড ডিউটির অধিকারী। অথচ এখন পর্যন্ত কোভিড ট্রেনিং তো থাক, আমার নিজের ওয়ারিন্টেশন ট্রেনিংও করতে পারিনি। ভাবছিলাম নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যখন হবে, তখনই পাবো।কিন্তু আসলে কি সব নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হচ্ছে? এই স্ট্যাটাসই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এরপর তাকে ৪ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল থেকে সরকারী কর্মচারী হাসপাতালে সংযুক্তিতে পদায়নের আদেশ দেওয়া হয়। (খোলাচিঠি) শুধু তাই নয়, গত ১২ এপ্রিল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার চিঠি দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে খৈফিয়ত তলব করেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, খাদেমুল ইসলাম কর্তৃক বর্তমান ভয়াবহ করোনাকালীন সময়ে সংযুক্তিতে পদায়ন নিয়ে নার্সিং ও ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের একজন পরিচালককে সংশ্লিষ্ট করে সমালোচনামূলক বক্তব্য ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রচার করা হয়েছে। যা অধিদপ্তরকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলা হয়েছে। করোনা কালীন সময়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে সমালোচনামূলক বক্তব্য প্রদান করা সরকারী কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির পরিপন্থি ও যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ মর্মে কৈফিয়ত তলব করা যাচ্ছে যে, ফেসবুক স্ট্যাটাসে সমালোচনামূলক বক্তব্য প্রদান করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এর কারণ এ পত্র জারীর ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ অধিদপ্তর বরাবর দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এদিকে খাদেমুল প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামীলীগের সকল নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক খোলা চিঠি লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি গান ও বই লিখেছেন উল্লেখ করে খোলা চিঠিতে তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করার কারণে জামায়াত বিএনপির নার্সদের পরিকল্পনায় এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের এক পরিচালকের সহযোগিতায় তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে । এর আগেও তার সাথে এমন ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, সরকারি চাকরীতে যোগদানের একদিন পূর্বেই আমাকে বদলী করা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পদায়নের জায়গা থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপেজলায়। দীর্ঘ চৌদ্দ মাস লড়াই সংগ্রাম করে আসলাম। কিন্তু এখানেও কথা আছে। বদলী চাইলাম আমার স্ত্রীর কর্মস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আমাকে হয়রানি করার করার জন্য দিলো পঙ্গু হাসপাতালে। অনেক কষ্টে একজনের সাথে পারস্পরিক বদলী নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলী হয়ে আসলাম। সেখানেও আমাকে ষড়যন্ত্র করে পঁচিশশত নার্সের মধ্যে আমাকেই সবার আগে যোগদানের পনের দিনের মধ্যে কোভিড ডিউটি দিলো। আমি দেশ ও জাতির স্বার্থে মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে মানুষের সেবা করবো বলে কোন প্রশ্ন তুলিনি। দীর্ঘ একবছরের বেশি আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালেই কর্মরত আছি। এই রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে বর্তমানে কোভিড পজিটিভ অবস্থায় যখন বাসায় ছুটিতে আছি। তখনি আমার প্রতি আরেক ষড়যন্ত্র ও প্রহসণের সংযুক্তি পদায়ন অন্য হাসপাতালে। বিষয়টি স্বাভাবিক হলে মেনে নিতাম কিন্তু শুধু হয়রানির স্বার্থে তা করা হয়েছে। আমার পরিবারে আমি ও আমার সহধর্মিণী দু’জন চাকরি করি। আমাদের একটা ফুটফুটে বাচ্চা আছে। এভাবে প্রতিহিংসার স্বীকার হতে হতে আজ আমি বড্ড ক্লান্ত। উল্লেখ যে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কয়েকটি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দুটি বই লিখেছেন। মুজিববর্ষে তার দুটি গানের এলব্যাম প্রকাশিত হয়। যার একটি মাননীয় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন মোড়ক উন্মোচন করেন এবং পূর্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।২০১৫ সালে বিএনপির হরতাল অবরোধে পোড়া রোগীদের বই বিক্রির লব্ধ পঞ্চাশ হাজার টাকা অসহায় ছয়জন রোগিদের মাঝে বিতরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত সাবেক ভিসি অধ্যাপক কামরুল হাসান খান একটি এবং নার্স দরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণা গ্রন্থটি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নার্সেস দিবসে ওসমানী মিলনায়তে মোড়ক উন্মোচন করেন। এমন কি নার্সিং অধিদপ্তরে মুজিব বর্ষের পোস্টার লাগানোর পরে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ছিড়ে ফেলার অভিযোগ দিলেও একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225