, , , ,

বরগুনায় খাঁচায় মাছ চাষ

বিশেষ প্রতিবেদক, বরগুনাঃ
পুকুর ভরা টলট‌লে জল। তার ওপ‌রে বাঁশের মাচা। দূর থেকে মনে দেখ‌লে হবে মাচায় লাউ-কুমড়া ঝুলছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা মিলল এক নতুন দৃশ্যের। আর তা হলো- অসময়ের তরমুজ। ঝুলছে পুকু‌রের মাচায়। তরমুজ মৌসুমি ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। এখন জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসেও সুস্বাদু তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে।

অসময়ের এই তরমুজের চাষ হচ্ছে বরগুনার সদর উপ‌জেলার কা‌লিরতবক গ্রা‌মে। এই প্রথম উপজেলায় মাচায় চাষ করা হলো তরমুজের। যদিও এই এলাকায় তরমুজের চাষ হয় না তবুও ইউটিউব দেখে শখের বসে করা এই ফসলই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষক ব‌নি আমিনকে। তার বাবা আব্দুল মান্না ও মা রো‌ফেজা বেগম তা‌কে সহ‌যো‌গিতা কর‌ছেন। প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে ‘বেঙ্গল টাইগার’, ‘কা‌রিশমা’ ও ‘কা‌নিয়া’ জাতের তরমুজ চাষ করে রীতিমতো এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। এই নতুন পদ্ধতিতে এই মৌসুমি ফল বর্ষায় চাষ হ‌চ্ছে।

থাই জাতের তরমুজ চাষে ওই কৃষকের ফলন বেশ ভালো হয়েছিল। আবার বিক্রি করেও ভালো আয় করেন। মাত্র ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় ক‌রে তিন লাখ টাকা আয় কর‌ছেন। তাই দেখে আগামী‌তে ওই এলাকার অনেক কৃষক তরমুজের চাষ করবেন।

মালচিং পদ্ধতিতে এই তরমুজ চাষ হয়েছে। মাচায় ঝুলছে হলুদ তরমুজ। রঙের ভিন্নতা থাকলেও স্বাদে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিছু অংশে কালো ও সবুজ রঙের তরমুজও আছে। তবে হলুদ তরমুজের সংখ্যা অনেক বেশি। দেখতেও বেশ সুন্দর। তা দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছেন কৃষক ব‌নি ‌আমিনের খেতে।

ব‌নি আমিন জানান, ৮০ শতাংশ জমিতে তিনি এ তরমুজের চাষ করেছেন। গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তিনি তরমুজের বীজ বপন করেন। এখন তার মাচায় তরমুজ ঝুলে আছে। অল্প দিনের মধ্যে বিক্রি করবেন। তিনি জানান, প্রায় দুই হাজার ৭০০ টাকা দি‌য়ে ৩০ গ্রাম বীজ কিনেছিলেন।

এই বীজ থেকে ৫০০ গাছ হয়েছে। গাছে প্রায় দেড় হাজার তরমুজ ফ‌লে‌ছিল। বৃ‌ষ্টি কারণে প‌চে প্রায় ৫০০ তরমুজ নষ্ট হ‌য়ে‌ছে। এক হাজার তরমুজ বি‌ক্রি ক‌রে তিন লাখ টাকার বে‌শি হ‌য়ে‌ছে। বীজ কেনার পাশাপাশি অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তার প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর এই তরমুজ বেচে তিন লাখ টাকা আয় ক‌রে‌ছেন।

এদিকে মাচায় তরমুজ চাষ দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকার কৃষকরা তার কাছে আসছেন। কীভাবে আগামীতে তারা নিজ নিজ জমিতে তরমুজ চাষ করবেন সে সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন। এলাকার একাধিক কৃষক জানান, সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে এই পদ্ধাতিতে তরমুজের চাষের বিস্তার ঘটবে। সেই সঙ্গে বেশি পরিমাণ জমিতে তরমুজের চাষ হলে এলাকার মানুষ কম দামে এই ফল খেতে পারবে। বাজারে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকও লাভবান হবেন।

সদর উপ‌জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তা‌ফিজুর রহমান বলেন, এই তরমুজের চাষ লাভজনক। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এত লাভজনক ফসল আর নেই। তাই কৃষকেরা এর চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, তরমুজটি অসময়ে বাজারে পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতারাও উপকৃত হচ্ছেন।

রোগতত্ব বি‌শেষজ্ঞ ডা. মিজানুর রহমান বলেন, তরমুজ মানুষের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই রয়েছে তরমুজে। তরমুজের মৌসুমে মানুষ এগুলো পেয়ে থাকে। সেটা অসময়ে পেলে বাড়তি পাওয়া বলা যায়।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225