, , , ,

শেখ মুজিব মৃত্যুর পর থেকে খালি পায়ে হাটেন যিনি

বিশেষ প্রতিবেদক, বরগুনাঃ
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু মানতেই পারেনি, আর যে মাটিতে শেখ মুজিব ঘুমিয়ে আছে, সে মাটিতে আমি কোন রকমই জুতো পায়ে হাটতে পারিনা! শেখ মুজিবকে হারানো শোক আজো বুকে ধারণ করে ৯৪ বছরের ইছাহাক আলী শরীফ অত্যান্ত করুন অবস্থায় দুঃখের সাথে কেঁদে কেঁদে এমন কথা গুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, এখন মানুষ রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। আমি রাজনীতি করিনা। তাই শেখ মুজিবকে রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। যার ডাকে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে আমি তাকে অত্যান্ত ভালবাসি। একজন মুজিব ছিল বলেই আজ বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। আর এ দেশের মাটিতে সেই নিরাপরাধ মানুষটি চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন সেই বঙ্গবন্ধুর মাটিতে জুতো পায়ে হাটবোনা। মৃত্যুর আগে একবার বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত ও তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার ইচ্ছা পোষন করেন তিনি।

নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় কালো পোষাক আর খালি পায়ে ৪৬ বছর পার করছেন ইছাহাক আলী শরীফ। তিনি একজন দীনমজুর। জীপন যাপনও তার অত্যন্ত সাদামাটা। সত্তরের দশকে ইছাহাক শরীফ চট্টগ্রামে জাহাজভাঙ্গা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৭৫ সালের আগষ্ট মাসে ছুটিতে বাড়ী আসেন তিনি। ১৫ আগষ্ট কালোরাতে কিছু বিপদগামী সেনা সদস্যদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হওয়ার খবর শুনে তিনি অস্থির হয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর মরদেহ দেখার জন্য ১৬ আগষ্ট তিনি ঢাকা গিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মরদেহ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়ায় তার ইচ্ছে সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হারানো শোকে তিনি আজীবনের জন্য কালো পোষাক পরিধান ও খালি পায়ে হাটার সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে তিনি কালো ফতুয়া কালো লুঙ্গী আর খালী পায়ে হাটা শুরু করেন।

এরপর থেকেই ইছাহাক আলী শরীফ ৪৬ বছরের এমন অবস্থা দেখে স্থানীয়রা তাকে ‘মুজিব পাগল’ বলে আখ্যায়িত করেন। বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস এই মুজিব ভক্ত ইছাহাক আলীর।

অনেক স্থানীয় বয়জ্যেষ্ঠরা জানান, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে যখনই ইছাহাক আলী শরীফকে দেখতাম তা-শুধু পরোনে কালো লুঙ্গি, কালো জামা গায়ে ও খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কোন আতিথেয়তাসহ সভা-সমাজে ও হাট বাজারে যাওয়া-আসায় এ ছাড়া অন্য কোন পোষাকে কেহর নজরে পরেনি কোন দিন। আর শেখ মুজিবকে নিয়ে কোথাও কোন উল্টো-পাল্টা কথা শুনতেন তার প্রতিবাদ করতেন। এমনি শেখ মুজিবকে নিয়ে কুটুক্তির প্রতিবাদ করায় তিনি একবার হামলার শিকার হয়েছিলেন। পুরো জীবন শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বলে কাটিয়ে দেওয়া এই মুজিবপাগল ইছাহাক আলী ২০০১ সালে বিএনপি’র শাসনামলে বঙ্গবন্ধু অন্তপ্রাণ এই মানুষটি বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ‘জয়বাংলা’ ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতেন। এ কারনে কতো লোকের কাছে যে তার মার খেতে হয়েছে তার অন্তঃ নেই। কোন রকম অত্যাচার, নিপীড়ণ তাকে জয়বাংলা থেকে সরাতে পারেনি।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছোটবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুঃ তৌফিকউজ্জামান তনু বলেন, আমার বাড়ী থেকে ইছাহাক আলী শরীফের বাড়ী মোটামোটি কাছে। হাট-বাজার তথা কোন যায়গায় তাকে খালী পায়ে ও কালো পোষাক ছাড়া দেখা যায়নি। তিনি অত্যান্ত ভালো মানুষ। সেই ‘মুজিব পাগল’ মানুষটির অভাবে দিন কাটলেও ত্রানসহ কোনদিন কোন কিছুই দাবী করেননি। তবে বয়জ্যেষ্ঠ হিসেবে তার দিকে বেশ খেয়াল রাখছি।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225