তিস্তার পানি বেড়েই চলেছে, পানি বন্দি উত্তরের কয়েক জেলার মানুষ

নতুন করে পানি বাড়ায় তিস্তায় ফের বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উত্তরের কয়েক জেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। এদিকে বগুড়া ও জামালপুরে কমছে বন্যার পানি।

লালমনিরহাট : ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা ধরলার ৬৩ চরে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা-ধরলায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নতুন করে আবারও পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৫ হাজার মানুষ। শনিবার সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা দোয়ানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানি পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার। বিকালে পানি একটু কমলেও তা বিপৎসীমার ওপরেই থেকে যায়। ব্যারাজ রক্ষার্থে ৪৪টি জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন পানি উন্নায়ন বোর্ড। হাতীবান্ধার সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, তৃতীয় দফায় এলাকার লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

নীলফামারী : তৃতীয় দফায় বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি। কয়েক দিন ধরে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও শনিবার সকাল থেকে ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ফের বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন জেলার ১০ ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ।পাউবো সূত্র জানায়, তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল সকাল ৬টায় ২২ সেন্টিমিটার ও ৯টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে ধকল কেটে উঠতে না উঠতে ফের বন্যায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিস্তাবেষ্টিত আশপাশের ৩০ হাজার মানুষ।

রংপুর : অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গঙ্গাচড়ায় আবারও তিস্তার পানি বেড়েছে। লোকজন মালামাল ও গরু ছাগল দ্রুত গতিতে সরিয়ে নিচ্ছেন। ভেঙে যাচ্ছে নোহালীর বৈরাতী ও আলমবিদিতরের বাড়াতিপাড়ার বেড়িবাঁধের ব্লক পিচিং এবং বিনবিনা এলাকার পাকা রাস্তা। গাইবান্ধা : ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ৯ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। অন্যদিকে করতোয়ার পানি ২ সেন্টিমিটার কমেছে যা বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আর তিস্তার পানি ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আবার নতুন করে বন্যার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

 

বগুড়া : যমুনা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমেছে। অন্যদিকে বাঙালি নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে এবার বাঙালি নদীতীরবর্তী মানুষের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়া সারিয়াকান্দির ৪ শতাধিক বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার বহুলাডাঙা কমিউনিটি ক্লিনিক, আউচারপাড়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাকালিহাতা জামে মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে।

জামালপুর : জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকায় পানি কমলেও শাখা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ২০ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন দুর্গতদের জন্য নতুন করে আরও ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে। সব মিলিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ৪৩৪ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দুর্গত এলাকায় এসব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

 

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225