মোঘল সুমন শাফকাত, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ
বরিশালের বানারীপাড়ার উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার পদপ্রার্থী মিজানুর রহমান বেপারীর (৫০) মৃত্যুরহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ জুন শনিবাার সকাল ৯টায় ইলুহার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মলুহার গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফন শেষে এলাকার শত শত মানুষ মিজানুর রহমানের নির্বাচনী পোষ্টার বুকে নিয়ে মানববন্ধন করে তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এসময় এলাকাবাসীর দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। প্রসঙ্গত ৩ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর হেলথ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৪ জুন শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে ওই দিন রাত সাড়ে ১১ টায় তার মরদেহ বানারীপাড়ার মলুহার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে লাশ পৌঁছার পরে তার ৬ বছর বয়সি শিশু কন্যা মারিয়াসহ স্বজন, শুভার্থী ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। জানাগেছে মিজানুর রহমানের ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ফল ও কাঁচামালের আড়ৎ রয়েছে। ২ জুন বুধবার বিকাল ৫টার দিকে তিনি ও তার ভাই সেলিম আড়তে বসে কথা বলছিলেন। এমন সময় মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে কল এলে তিনি আড়তে সেলিমকে রেখে বাহিরে বেড়িয়ে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাঁচপুর ব্রিজের অদূরে পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় তারা মিজানের মুঠোফোনে তার ভাই সেলিমের নম্বর পেয়ে তাকে বিষয়টি জানান। পরে সেলিমসহ স্বজনরা সেখান থেকে মিজানকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরিশেষে গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে পাকস্থলী ওয়াশের পরে তার অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু করোনা রোগীর কারনে আইসিইউতে সুযোগ না পাওয়ায় সেখান থেকে মোহাম্মদপুরের হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ৩ জুন সকাল সোয়া ৮টায় মিজানের মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মিজানের ছোট ভাই সেলিম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ফলে সোনারগাঁও থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এদিকে স্বজনদের ধারণা নির্বাচনকে সামনে রেখে সুপরিকল্পিতভাবে তাকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে বিষ প্রয়োগ ও মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। মিজানুর রহমান এর আগেও দু’বার ইউপি মেম্বার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও জোরপূর্বক তার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে স্বজন ও স্থানীয়রা জানান। এবারও তিনি জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিপন কুমার সাহা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান মেম্বার প্রার্থী মিজানুর রহমান বেপারীর মৃত্যুর ফলে ওই ওয়ার্ডে ২১ জুন নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হবে।