, , , ,

বন্ধ হোক জন্ম নিবন্ধনের হয়রানী

মারিয়া আক্তার, লোকবেতার, বরগুনা।

বয়সের ব্যবধানে মনে হচ্ছে মা এবং মেয়ে হবে। বসে ছিলেন তারা বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিসের কার্যালয়ের সামনের পুকুর পাড়ে। আগে জন্ম নিবন্ধন ঠিক করার পরে ভোটার আইডি সংশোধন করার আবেদন করা যাবে ? একটু কাছে যেতেই শুনলাম তারা এমনটাই বলা-বলি করছিলো।
মেয়েটার মুখে বিরক্তির ছাপ, তার মাতাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। লজ্জা ভেঙে তাদের সালাম দিয়ে জানতে চাইলাম ঘটনাটি কি? কি আর বলবো আপু গ্রামের মানুষ আমরা, আমার মেয়ে (লায়লা-রুপক নাম) কিছুদিন আগে একটি চাকুরীতে নিয়োগ পেলেও কাগজে একটু ঝামেলা থাকার কারনে এখনো যোগদান করতে পারেনি। বিস্তাারিত জানতে চাইলে বলেন মেয়ের সকল শিক্ষাগত সনদে মায়ের নামের সাথে তার নিজের নামের জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের লেখা নামের সাথে মিল নেই।
তিনি তার জন্ম নিবন্ধন ঠিক করানোর জন্য নিজ ইউনিয়ন পরিষদে গেলে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ঠিক করে আনলেও সমস্যা দেখা দিলো ওই মায়ের অন্য সন্তান যিনি সরকারি চাকুরী করছেন। কারনটি হলো দুইভাই বোনের মা একজন হলেও তাদের সকল সনদে তাদের মায়ের নামে গরমিল রয়েছে।
প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে তারা নির্বাচন অফিসে কি করছিলো? হ্যাঁ জন্ম নিবন্ধন করার পাশাপাশি মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার আবেদন করতে গেলে সেখানে বাঁধে আরেক হট্টগোল। নির্বাচন অফিস বলছে সন্তানদের আইডি পরিবর্তন করতে বাবা মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্র লাগে। কিন্তু এাঁই নাকি তাদের কাছে প্রথম কোন সমস্যা যে সন্তানের জন্য মায়ের পরিচয় পত্রের নাম পরিবর্তন করার আবেদন এসেছে। এবারে যাওয়া যাক মুদ্রার তৃতীয় পিঠের দিকে, হ্যা শুনতে একটু বেখাপ্পা লাগলেও এই গল্পের রয়েছে এমনই একটি অংশ।
আপনার কাছে প্রশ্ন এই মেয়ের সনদগুলোতে যেখানে মায়ের নামে যে ভুল রয়েছে তাকি পরিবর্তন করা সহজ ছিলো? এই সমস্ত জটিলতা আসলে কি কারনে? হয়তো আপনি পিতা-মাতার অসচেতনতার কথাই বলবেন। তবুও পাঠক, প্রশ্ন রেখে গেলাম আপনার কাছে। এবারে একটু মূলগল্পে যাই। প্রসঙ্গ জন্ম নিবন্ধন। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে সকলের জন্য জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতা মূলক করেছে সরকার এবং সন্তান জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করলে বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে। পরে হলে তার জন্য ২৫ টাকা ফি দিতে হবে। মূলত শিশুজন্মের পাঁচ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করলে একটা ফি দিতে হবে অভিভাবকদের।
২০১৯ সালে ইউনিসেফের ৭৩তম জন্মদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব ব্যাপি বিগত ১০ বছরের তুলনায় জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া ২০ শতাংশ বেড়েছে। তবে এখনও পাচঁ-ছয় বছরের কম বয়সের অধিকাংশ শিশুরাই অনিবন্ধিত থেকে যাচ্ছে। সেই সাথে অনেকেই জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্ব না বোঝার জন্য জন্ম নিবন্ধনের সময় সন্তানের অভিভাবকরা কোনো রকম একটা নাম কোয়াস্তে তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করেছে, যে কারনেই গল্পের মেয়েটির মতই প্রায় হাজারে এক জনের এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রান্তিক এলাকার শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। জন্ম নিবন্ধনে ভূল হলে তা সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হবে এবং জন্ম নিবন্ধন তথ্যে আবেদন করতে হবে। যা অনেক অভিভাবকই জানেন না। যে কারনেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
২০১৫ সালে সেভ দ্য চিলড্রেনের এক গবেষণায় উঠে আসে বাংলাদেশে বস্তি এলাকায় প্রায় ৩৭ ভাগ শিশুই জন্ম নিবন্ধনের আওতায় নেই। প্রান্তিক এলাকার মা-বাবার অজ্ঞতার কারনে শিশুরা জন্ম নিবন্ধনের আওতায় নেই এবং অসচেতনতার জন্য ও জন্ম নিবন্ধনে ভুল হয় এমন মন্তব্য কোন কোন মহলের।
এসডিজি ১৬.৯ এ বলা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সহ সকলের জন্য বৈধ পরিচয় পত্র প্রদান করা। অথচ প্রান্তিক এলাকার মানুষগুলো এখনও অজ্ঞতা এবং জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্ব স¤পর্কে না জানার কারনে নিবন্ধনের আওতায় অধিকাংশ পরিবারই নেই। জন্ম নিবন্ধনই একটি শিশুর আসল পরিচয়। জন্ম নিবন্ধন যেমন জরুরি, তেমনি জন্ম নিবন্ধনে ভুল তথ্য থাকলে কত খানি বিপদে পড়তে হয় তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগীই জানেন।
শহরের পৌর সভা অথবা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন করে থাকে, পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধনে কোন সমস্যা হলে সেই সকল সমস্যা সমাধানের সেবাও প্রদান করে থাকে যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠিরা এখনও জানেনা। বাংলাদেশে সকলের বৈধ পরিচয়পত্র এবং সর্বাধিক শিশুর জন্ম নিবন্ধন প্রদানের মাধ্যমেই এসডিজি অভিষ্ট ১৬.৯ বাস্তবায়ন করতে সকলের সচেতনতার কোন বিকল্প নেই, এমন মন্তব্য সচেতন মহলের। #

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225