বিশিষ্ট কবি, বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবী এবং নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ এক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব-সুফিয়া কামাল।
কবি পরিচয় ছাপিয়ে তাঁর মহত্ব, আদর্শনিষ্ঠা, সুবিবেক এবং কোমল অথচ দৃঢ় চরিত্র তাঁকে পরিণত করেছে এক মহীয়সী ব্যক্তিত্বে। আজ সুফিয়া কামালের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী।
যুগ পরিবেশের তুলনায় অগ্রগামী নারী সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০শে জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত রক্ষণশীল পরিববারে। বেড়ে উঠেছেন নানাবাড়ি শায়েস্তাবাদের নবাববাড়ির কঠোর নিয়ম-কানুন আর অনুশাসনের মধ্য দিয়ে। বাড়িতে বাংলা ভাষার স্থান ছিল সংকুচিত। নিজ আগ্রহে তিনি বাংলা ভাষায় সাহিত্য পাঠ ও সাহিত্য চর্চা করেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা ‘সৈনিক বঁধূ’ নামের একটি ছোটগল্প, প্রকাশিত হয়েছিল বরিশাল থেকে ‘তরুণ’ পত্রিকায়।
সুফিয়া কামালের অন্যান্য রচনাপঞ্জির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সাঁঝের মায়া’, ‘কেয়ার কাঁটা’, ‘মায়া কাজল’, ‘মন ও জীবন’, ‘উদাত্ত পৃথিবী’, ‘মোর যাদুদের সমাধি ’পরে’, ইত্যাদি। ভ্রমণ কাহিনি, দিনপঞ্জি এবং শিশুতোষ গ্রন্থও রচনা করেছেন তিনি। বিশ্বের একাধিক ভাষায় তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে। ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি রুশ ভাষায় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত হয়। পাকিস্তান আমলে সকল দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কবি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও তাঁর অনবদ্য ভূমিকা ছিল। উদারপন্থী, অসামপ্রদায়িক ও প্রগতিমনষ্ক সুফিয়া কামাল স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে ছিলেন পুরোভাগে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার। প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা ছিল তাঁর।
কর্মকৃতীর স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ২০শে নভেম্বর সুফিয়া কামাল প্রয়াত হন। বাঙালির সমাজ, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি – সকল ধারাতেই তাঁর গতিশীল বিচরণ ছিল। তাই সদাই তিনি আমাদের সকল প্রেরণার উৎস।