, , , ,

বেনাপোল ও যশোর ২৯ আবাসিক হোটেল এখন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার

মোঃ নজরুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধিঃ

বেনাপোল ও যশোরের ২৯টি হোটেল এখন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। এ হোটেলগুলোসহ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে শুক্রবার পর্যন্ত মোট নয়শ’ ৩৬ জন ভারত থেকে আসা মানুষ কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া, যশোরের আশপাশের চার জেলার হোটেলগুলোও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল।

ভারতে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরছেন। এ তালিকা প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। সেইসাথে অনেকের দেহে মিলছে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট।

২৬ থেকে ৩০ এপ্রিল শুক্রবার রাত পর্যন্ত বোনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন নয়শ’ ৩৬ জন। এরমধ্যে শুক্রবারই ফিরেছেন দুশ’ ৪০ জন। ভারত ফেরত প্রত্যেককে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। যা নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগসহ জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিপুল সংখ্যক এসব মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসন যশোরের প্রায় সব আবাসিক হোটেল রিক্যুইজিশন করেছে। এরমধ্যে তারকা হোটেলগুলোও বাদ পড়েনি। শুক্রবার দুপুরে কালেক্টরেট সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে হোটেল মালিকদের নিয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অবশ্য এ সভার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবাসিক হোটেল রিক্যুইজিশনের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।

যশোরে রিক্যুইজিশন করা ১৬টি আবাসিক হোটেল হলো জাবির হোটেল ইন্টারন্যাশনাল, হাসান ইন্টারন্যাশনাল, সিটি প্লাজা, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ডরমেটরি, ম্যাগপাই, আর এস, মণিহার, ম্যাক্স, সোনালী, সিটি হোটেল, শাহরিয়ার, বলাকা, নয়ন, নিউওয়ে, প্রিন্স, সিটি এবং যশোর হোটেল।

এসব হোটেলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে মানুষ ওঠানো শুরু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হোটেল নয়নে ৩৭ জনকে, হাসান ইন্টারন্যাশনালে ৪৪, ম্যাগপাইয়ে ১৭, আরএস হোটেলে সাতজন, হোটেল ম্যাক্সে ১১ জন ও শেখ হাসিনা আইটি পার্কের ডরমেটরিতে ছয়জনকে রাখা হয়েছে।
এছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলার গাজীর দরগাহ এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দুশ’জন, যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ২৯ জন, উপশহর ক্লিনিকে সাতজন, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন, বেনাপোলের রজনীগন্ধা, পোর্টভিউ, আ্যারিস্টোকেট, জুয়েল আবাসিক, চৌধুরী হোটেল, নিশাদ হোটেল, ফ্রেশ হোটেল, নাহিদ হোটেল, হোটেল সানসিটি, মৌ হোটেল, হোটেল সিটি, বেনাপোল পর্যটন ও রহমানিয়া হোটেলে রয়েছেন তিনশ’ ৫৩ জন।

ইতিমধ্যে বেনাপোলের হোটেলগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে। একইসাথে যশোরের পাশের জেলার মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলের হোটেলগুলোতেও তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ হিসেবে খুলনায় ব্যবস্থা করা হয়েছে সাতশ’ জনের, ঝিনাইদহে দুশ’ ৫০ জন, নড়াইলে একশ’ ৫০ জন ও সাতক্ষীরায় চারশ’ জন।

এদেরমধ্যে যারা আর্থিক সংকটে আছেন তাদেরকে ঝিকরগাছার গাজির দরগাহ মাদ্রাসায় রাখা হচ্ছে। তাদেরকে জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তারা ইচ্ছা করলেই পাঁচ তারকা হোটেলে থাকতে পারবেন। একইসাথে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আসা এসব মানুষের মধ্যে শুক্রবার এসেছেন ২৪০ জন। এদেরমধ্যে ১৫ জন রোগী রয়েছেন।

নাভারন সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান জানান, যেসব স্থানে ভারতফেরত যাত্রীদের রাখা হয়েছে, সেখানে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। ১৪ দিন অবস্থানের পর করোনা নেগেটিভ সনদপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এসব যাত্রীকে নিজ বাড়িতে যেতে দেয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা ইউসুফ আলী জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ভারত ফেরতদের চিকিৎসার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই, তাদেরকে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ভূমি রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ভারত থেকে যত লোক ফেরত আসার কথা আমরা চিন্তা করছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি আসছে।বেনাপোলের হোটেলগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে। যে কারণে এখন যশোর শহরের হোটেল মালিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে রিক্যুইজিশন করা হয়েছে।
তিনি জানান, হোটেলের মালিকরা ভারতফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের স্বল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা করতে সম্মত হয়েছেন। এসব হোটেলে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225
  • Untitled post 11155
  • Untitled post 14630
  • Untitled post 14225